দক্ষ নেতৃত্বে গতিশীল ফায়ার সার্ভিস

দক্ষ নেতৃত্বে গতিশীল ফায়ার সার্ভিস

বিশেষ সংবাদদাতা September 03, 2023

বর্তমান সরকারের সময়ে ফায়ার সার্ভিসের নানা ধরনের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, বিএসপি (বার), এনডিসি, পিএসসি, জিএমফিলের দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অগ্রগতি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গতিশীল সব দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের সেবাকাজ। অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাড়ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্মরতদের নানা সুবিধা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন মহাপরিচালক হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে যোগদানের পর থেকে উন্নয়নের এই ধারা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়েছে। তার সময়ে জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফায়ার সার্ভিসের এই অগ্রগতি থামাতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপতত্পরতা চালাচ্ছে।

 

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণকালে আত্মাহুতি দেওয়া ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। বর্তমান মহাপরিচালকের সময়েই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটারগণ তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সুনাম বয়ে এনেছেন। ফায়ার সার্ভিসের যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টার্ন টেবল লেডার। ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নত হচ্ছে, বাড়ছে এর কর্মীদের নানা সুবিধা। উন্নয়নের এই ধারা চলমান রয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিসের সেবা সক্ষমতা আগের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ‘দুঃসময়ের বন্ধু’ হিসেবে সব দুর্যোগে সবার আগে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য নিবেদিত রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের সাফল্যের এই ধারায় সবশেষ সংযুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজীবন রেশনের সুবিধা। ১ জুলাই ২০২৩ বা তার পরে অবসরে গমনকারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আজীবন রেশন-সুবিধা পাবেন। গত ১৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীম বানু শান্তির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিলে মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করে। রেশন হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রতি মাসে ২০ কেজি চাল (সেদ্ধ/আতপ), ২০ কেজি আটা, দুই কেজি চিনি, সাড়ে চার লিটার ভোজ্যতেল ও দুই কেজি ডাল পাবেন। তবে কোনো কর্মকর্তার পরিবারের সদস্য যদি এক জন হন, সে ক্ষেত্রে তিনি সব আইটেম অর্ধেক হারে পাবেন। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান প্রতিবন্ধী, পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ অথবা অবিবাহিত কন্যা হলে তারা আজীবন এই সুবিধা পাবেন।

 

 

ফায়ার সার্ভিসের অগ্রগিতর বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অগ্রগতির এই সুবিধা ধরে রাখা এবং কাজে লাগানোর জন্য উন্নতমানের প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, বিশ্বমানের উন্নত প্রশিক্ষণসুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে মুন্সীগঞ্জে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার একাডেমি’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এই একাডেমি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হলে সেখানে বিশ্বমানের অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের প্রশিক্ষণসুবিধা সৃষ্টি হবে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে সরকারের ধারাবাহিক এই উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত করতে হীন স্বার্থে কিছু লোক অপতত্পরতা চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ কার্যক্রম, ক্রয় প্রক্রিয়া এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিসের সব ক্রয় প্রক্রিয়া সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮ নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এর আলোকে গত অর্থবছরে মোট ৪৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে এবং তার মধ্যে ২১টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কার্যাদেশ পেয়ে কাজ সম্পাদন করেছে, যার একটিও ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজনের নামের প্রতিষ্ঠান নয়।

 

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে। যেখানে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সভাপতি, উপপরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) সদস্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর একজন প্রতিনিধি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ফায়ারফাইটার পদে ত্রুটিমুক্ত শারীরিক গঠন নিশ্চিত করতে পেশাদার চিকিৎসকগণের মাধ্যমে মেডিক্যাল চেকআপ করা হয়ে থাকে। উল্লিখিত কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তার এককভাবে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফায়ার সার্ভিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার বদলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পাদন করে থাকে। আর অন্য পদগুলোতে বদলি করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বদলি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রদেয় সেফটি প্ল্যানও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স)-এর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি কমিটি প্রদান করে থাকে। তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণকারীদের সহযোগিতা করে থাকে।

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, উন্নয়নের চলমান ধারা বাধাগ্রস্ত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ, বেনামে মিথ্যা অভিযোগ প্রদানসহ নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এমন তথ্য পেলে যাচাই-বাছাই ছাড়া তা বিশ্বাস না করার জন্য এবং তা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ বা মতামত পরিবেশন না করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Share This