জেনারল আজিজকে নিয়ে “জেনারেল আজিজের তেলেশমাতি” শিরোনামে মানবজমিনের প্রতিবেদন এবং তথ্যের সত্যতা যাচাই এ অনুসন্ধান।
বিশেষ সংবাদদাতা
June 13, 2024
হলুদ সাংবাদিকতা বা ইয়েলো জার্নালিজম দেখতে কেমন হয় সেটা ৫ ই জুন মানবজমিনের করা শরিফ রুবেলের এই প্রতিবেদনটা পড়লে খুব ভালো করে বুঝতে পারবেন। সেনসেশনাল শিরোনাম, অতি দূর্বল গবেষণা, স্ক্যান্ডাল নির্ভর তথ্য এবং তাতে কিছু জ্ঞানপাপীর গুরুত্বারোপ, মেকি আবেগী হওয়ার চেষ্টা — সর্বোপরি বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্টিংয়ের সকল কিছুই এতে মিশ্রিত আছে।
বিডিআর বিদ্রোহ পরবর্তী বাংলাদেশকে কঠিন এক পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী ও বিজেবিকে একটি সুশৃংখল বাহিনীতে রূপান্তর করেন। নিজ মনণ ও মেধা দিয়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হওয়ার পরিস্থিতি থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। যিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে দুই দুইটি ডিসিপ্লিনারি বাহিনীর সর্বোচ্চ পদ মোট ৭ বছর অলংকৃত করেছেন, একধারে ৪ বছর ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ডিজি ও পরবর্তীতে ৩ বছর ছিলেন সেনাপ্রধান। অবসরে যাওয়ার তিন বছর পর কেন হঠাৎ দেশি-বিদেশি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলেন এ নিয়ে দেশের জনসাধারণ চিন্তিত, এমনকি বিশ্বের বৃহৎ পরা শক্তির নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে ভিন্ন কিছু নয়তো? জনমনে আজ সেই প্রশ্ন ।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় পত্রিকা সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অবঃ) আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশাল এক রিপোর্ট করেছে যা অসত্য তথ্য দিয়ে গরুর রচনার ন্যায় তৈরী, বিভ্রান্তমূলক এবং উদ্দ্যেশ্যপ্রনোদিত। এ নিয়ে এপেক্স ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন জাতীয় ঐ পত্রিকাটির বিরুদ্ধে। জানা যায়, ও নরসিংদী হেরিটেজ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষও অত্যন্ত কঠোর ভাষায় সমাজে সন্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে চরিত্র হরনের উদ্দ্যেশ্যে রিপোর্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছে মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের জন্য যার অনলীপি এই প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানব জমিন পত্রিকাপ্তিবেদনের সত্যতা জানতে সরজমিনে অনুসন্ধান করে জানতে পারি পত্রিকার নিউজটি সম্পূর্ণ অসৎউদ্দেশ্য প্রণোদিত যাহা তথ্য প্রমাণ সহ এখানে তুলে ধরা হলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সেনাপ্রধানগন অবসরের পর পর তাদের এলপিআর এর এক বছর ঢাকা সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর যেই বাড়িতে থাকেন তার নাম “পথিকৃৎ” বাসা নং-৩, যাহা ঢাকা সেনানিবাসে আদমজী কলেজের ঠিক উল্টো দিকে অবস্থিত। বর্তমানে বর্তমান সেনাপ্রধান এর আগামী ২৪ জুন ২০২৪ হতে শুরু হতে যাওয়া এলপিআর পিরিয়ডে বসবাসের জন্য তৈরী করা হয়েছে সেনাকর্তৃপক্ষ দ্বারা।
মানব জমিন তাদের “জেনারেল আজিজের তেলেসমাতী” প্রতিবেদনে দাবী করেছে সেটা নাকি জেনারেল আজিজের বাড়ি। অবসরে যাওয়া সকল সেনাপ্রধানদের এলপিআরের ১ বছর সময় বসবাসের জন্য সেনাবাহিনীর একটি নির্ধারিত বাড়ীটি (পথিকৃৎ) কি করে একজন সাবেক সেনাপ্রধানের নিজস্ব সম্পত্তি হয়? এই ধরনের মিথ্যা, উদ্ভট তথ্য সম্বলিত রিপোর্টকে পাঠকগন, বিশেষ করে সেনাবাহীনির সদস্যরা কোন মানের সাংবাদিকতা মনে করবে???
মানব জমিনের দাবী যে ঢাকা সেনানিবাসের গল্ফ ক্লাবের উল্টো দিকে নিকুন্জ্ঞ -১, ৬ নং সড়কে বাড়ী নং RCF9+F5P “আজিজ রেসিডেন্স” নামের একটি বিশাল আলিশান বাড়ির মালিক জেনারেল আজিজ। তদন্তে দেখা যায় নিকুঞ্জ -১ এর ৬ নং সড়কে ঐ নামের কোন বাড়ীর অস্তিত্বই নেই। এমন কি কুর্মিটলা গল্ফ ক্লাবের উল্টোদিকে ঢাকা সেনানিবাসের ৬ নং সড়কেও ঐ নামের কোন বাড়ীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নাই, জেনারেল আজিজের মালিকার প্রশ্ন তো পরের বিষয়। জেনারেল আজিজের চরিত্র হরনের উদ্দেশেই যে এই মিথ্যা তথ্য মানব জমিন পরিবেশন করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
দৈনিক মানব জমিন পত্রিকা আরো দাবী করে যে মোহাম্মদপুর রামচন্দ্র মৌজায় আর এস ৫৮২ দাগে জেনারেল আজিজের নাকি ৪ কাঠার ২ টি প্লট আছে যার মূল্য নাকি ৬ কোটি টাকা। আমাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোন এক সময় জেনারেল আজিজের নামে ঐ দাগে মাত্র ২ কাঠার একটি প্লট ছিল যাহা তিনি মিরপুর এর বাড়ি নির্মানের সময় ঐ ২ কাঠা জমি বিক্রি করে দেন ২০১৮ সালে এবং ঐ দাগে জেনারেল আজিজের বর্তমানে কোন প্লটই নাই। মানব জমিনের এই দাবী সম্পূর্ন অসত্য তথ্যনির্ভর।
দৈনিক মানব জমিন পত্রিকাটি লিখেছে, আশুলিয়া, সাভারে জেনারেল আজিজের নাকি ২১ বিঘা জমি এবং মনোসন্তোষপুর মৌজায় নাকি ৫০ বিঘা জমি আছে যার পাওয়ার অব এটর্নী নাকি জেনারেল আজিজ নিজ নামে নিয়ে রেখেছেন। খোঁজ নিয়ে যানা যায় যে এই তথ্যও মিথ্যা। আশুলিয়ায় জেনারেল আজিজের নামে বায়না করা ৪৯ .৫০ শতাংশ এবং ২৯.০০ শতাংশ জমির খোঁজ পাওয়া যায়। তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জেনারেল আজিজের নামে আশুলিয়া সাভারে কোন জমির “পাওয়ার অব এটর্নী” নেওয়ার কোন রেকর্ড পাওয়া যায় নাই। দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার এই রিপোর্ট ও অসত্য এবং নিঃসন্দেহে বলা যায় অসৎ উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত।
মানব জমিন পত্রিকার রিপের্টে বলা হয়েছে যে শ্যামলাদি কলাতিয়া জমজম হাউজিং এ জেনারেল আজিজের নাকি দুই দাগে ৮০ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে যা মিথ্যা। খোঁজ নিয়ে যানা যায় জেনারেল আজিজ অবসরে যাওয়ার পর ২০২২ সালে সেখানে ৩২ শতাংশ ডোবা জমি গত ২০২২ সালে এবং ২০২৪ সালে সেখানে ৩০ শতাংশ ডোবা জমি ক্রয় করেন। দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার এই তথ্যও অতিরন্জিত।
“হারিসের হাউজিং দখল” শিরোনামে মানব জমিন মনগড়া এবং বিভ্রান্তকর তথ্য দিয়ে লিখেছেন যে বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় ২৩৫ বিঘা জমি নিয়ে সাবেক এমপি রহমতুল্লাহর বড় ছেলে “হেদায়েতুল্লাহ রন” এর সাথে হারিস নাকি অন্যের জমি দখল করে হাউজিং প্রজেক্ট করছে। জেনারেল আজিজ, শাজাহান এবং হেদায়েতুল্লাহ রন এর একটি ছবির সূত্র উল্লেখ করে এর কাল্পনিক সংযোগ তৈরীর চেস্টা করে মানব জমিন। সাবেক সংসদ সদস্য জনার রহমতুল্লাহর বড় ছেলে এপেক্স প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিঃ এর পরিচালক জনাব হেদায়েতুল্লাহ মানব জমিনের ০৫ জুনের প্রতিবেদনের বিরূদ্ধে তার স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলীপি গত ১০ জুন ২০২৪ তারিখ মানব জমিনের ২ নং পৃস্ঠায় প্রকাশিত হয়। ঐ প্রতিবাদলীপি হতে জানা যায় জানা যায় জনাব শাজাহান এবং হেদায়েতুল্লাহ রন এই রমজান মাসে জেনারেল আজিজ সাহেবের বাসায় পূর্ব পরিচিতির সুবাদে স্বস্তেরীক একদিন ইফতারে যায়। ঐ দিন নেওয়া একটি ছবি কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হইতে সংগ্রহ করে জেনারেল আজিজ আহমেদকে জড়ানোর কাল্পনিক এবং চরিত্র হরনের উদ্দ্যেশ্যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। ঐ হাইজিং প্রজেক্ট এর সাথে জেনারেল আজিজের সামান্যতম সম্পৃক্ততা নাই বলে জনাব হেদায়েতুল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবাদলীপিতে বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যার কপি আমাদের হস্তগত হয়েছে। ঐ প্রতিবাদলিপিতে জনাব রহমতুল্লাহ আরো উল্লেখ করেছেন যে বাড্ডার সাতারকুলে মগারদিয়া এলাকায় গত ৩০ বছর যাবত জনাব হেদায়েতুল্লাহদের পৈত্রিক ৩৬০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও ঐ মানব জমিন দাবী করছে জেনারেল আজিজ আহমেদ এর ছোট ভাই হারিস এবং তার নামে ঢাকার হাজারীবাগে ১১ টি প্লট রয়েছে, যেই তথ্যটিও সম্পূর্ন মিথ্যা এবং অসৎ উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত।
দৈনিক মানব জমিনের ০৫ জুনের রিপোর্টে দাবী করেছে, জেনারেল আজিজ আহমেদ এর ছোট ভাই জোসেফ এবং হারিস এর নামে হেমায়েতপুর আলিপুর ব্রিজের পাশে মাকান রিভারভিউ হাউজিং এ নাকি ২১ টি প্লট আছে এবং জোসেফের নামে নাকি সিলিকন সিটি তে ২০০ কাঠা জমি আছে। আমাদের অনুসন্ধানে যানা যায় এই সকল তথ্যও সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোঁযাট এবং অসৎ উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত। খোজ নিয়ে আরো জানা যায় ঢাকা বা কোথাও হারিছ - জোসেফ এর নামে কোথাও তাদের কোন প্লট নাই।
আরো অনুসন্ধান করে জানা যায় যে মানব জমিনের দাবী করা মিরপুর সিরামিক সংলগ্ন যেই ১০ তলা বাড়ীর কথা বলা হয়েছে, সেই বাড়ী নির্মানেও তিনি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন এবং ৪ টি ফ্লোর বিভিন্ন জনের নিকট বিক্রয় করেছেন।
মানব জমিন পত্রিকা আরো দাবী করেছে যে নরসিংদীর মাধবদী রাইনাদী দিঘীর পাড় এ অবস্থিত “হ্যারিটেজ রিসোর্ট” রিসোর্টে নাকি জেনারেল আজিজের আংশিক সেয়ার আছে। ঐদিনই “হ্যারিটেজ রিসোর্ট” রিসোর্টের পক্ষ থেকে এই মিথ্যা সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ করে যা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত যার কপি আমাদের হস্তগত হয়েছে। ঐ প্রতিবাদলীপি থেকে জানা যায় যে সেনাপ্রধান থাকাকালীন ২০২০ সালের ২৯ মার্চ জেনারেল আজিজ তার শৈশব কাটানো এলাকা ঢাকার মোহাম্মদপুর নবোদয় সংঘের এক বাৎসরিক পিকনিকে নরসিংদীর মাধবদী রাইনাদী দিঘীর পাড় এ অবস্থিত ঐ “হ্যারিটেজ রিসোর্ট” এ গিয়েছিলেন। আরো জানা যায় জেনারেল আজিজ ঢাকায় থাকলে ঐ নবোদয় সংঘের বাৎসরিক পিকনিকে সাধারনতঃ অংশগ্রহন করেন।
২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে দেশের ক্রন্তিকালে বিজিবি মহাপরিচালক হিসাবে দেশের প্রতি জেনারেল আজিজের অবদান, সেনাপ্রধান হিসাবে করোনাকালীন সেনাবাহিনী দেহে দেশের জনগনকে দেয়া সেবা সহ শত অর্জন থাকা সত্ত্বেও দেশপ্রেমিক সাবেক এই সেনাপ্রধানকে মানসিক ও সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য দেশি-বিদেশি মিডিয়া ও বৃহৎ পরাশক্তি সহ দেশীয় কিছু সুশীল সমাজের ব্যক্তিত্ব উঠে পড়ে লেগেছে, এটা সহজেই অনুমেয়। এ ধরনের মন গড়া মিথ্যা প্রতিবেদন দেশের মানুষ মোটেও আশা করেনা।
Share This