সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও জাতীয় কিছু গনমাধ্যমের মিথ্যাচার
শাহিদুন আলম
December 14, 2021
বাঙালি হিসেবে পরনিন্দা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের (কতিপয় মানুষের) অন্যতম দিক। আমরা তিল কে তাল করতে পোক্তহস্ত। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ কে নিয়ে আল-জাজিরার প্রচারিত সংবাদ টি ছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। যা নিয়ে এদেশের একটা অকর্মা শ্রেণী দিনরাত ব্যস্ত ছিল। আমার কাছে সে সময়ে আল-জাজিরার প্রচারিত তথাকথিত অনুসন্ধানী সংবাদটি বাজে ডিরেকশন ও স্ক্রিপ্টের একটি নাটকের শ্যুট ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয়নি। একটি ধর্মীয় উগ্রপন্থী টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার এ সংবাদ যে সংবাদের কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা না করে তৈরী করা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সেনা প্রধান ছিলেন। তিনি সেনা প্রধান হবার পর সেনা বাহিনীর দ্বায়িত্ব ঠিক মত পালন করছেন কিনা এটা নিয়ে আল জাজিরা কোন প্রতিবেদন করে নাই।
জেনারেল আজিজ সেনা প্রধানের বাহিরে একটা পরিবারের অভিভাবক । কোন আইনে আছে ভাই ভাই কে ফেলে দিবে??একটা মিথ্যা মামলায় তাঁর ভাইদের ফাসানো হয়েছে। যাকে হত্যা মামলা করা হয়েছে সে কি ধোয়া তুলসী পাতা?? বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টার মামলার আসামী এবং নিষিদ্ধ ফ্রিডম পার্টির স্থানীয় সমন্বয়কারক ছিল । কেউ কি কখনো জানতে চেয়েছে কারা মোস্তাফিসকে ব্যবসায়ী বানিয়েছে?? পাগলা মিজান কে কারা কাউন্সিলার বানিয়েছে?? আহমেদ পরিবারে এক ভাই টিপুকে কারা হত্যা করেছে ? আহমেদ পরিবার কি তাদের ভাই হত্যা বিচার পেয়েছেন?? জেনারেল আজিজ যদি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হতেন তাহলে কি তিনি কি দুই দুটি বাহিনীর প্রধান থাকাকালীন তার ভাই এর খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে পারতেন না? এটা কি কেউ কখনো জানতে চেয়েছেন???
ভাই হারানোর কি যন্ত্রণা সন্তান হারানো কি যন্ত্রণা যারা হারিয়েছে তারা বুঝে। নতুন নতুন কিছু অর্বাচীন আছে মিডিয়ায় এবং সোস্যাল মিডিয়ায় এমন ভাবে কথা বলে যেন তাদের চেয়ে পন্ডিত মহাজ্ঞানী আর একটা ও নাই।
জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর নিজ যোগ্যতায় আজকে এই অবস্থানে এসেছেন। তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে কোন দুর্নীতি করেছেন কিনা তার তথ্য বাহির করেন। বরং জানতে পারবেন সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর যোগ্য এবং সফল সেনা প্রধান ছিলেন। তাঁর কোন দোষ ক্রুটি ও দুর্নীতি কোন তথ্য প্রমানাদী না পেয়ে তাঁর ভাইদের নিয়ে ভুয়া নিউজ করেছে আল জাজিরা । কখনো কি শুনেছেন ভাই ভাই কে মা বাবা তার সন্তাকে ফেলে দিতে?? আমার মনে হয় আপনাদের দ্বারা সম্ভব। কিন্তু সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজের দ্বারা সম্ভব না । কারন তিনি রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ। তিনি তার ভাইবোন কে শত প্রতিকুলতার মধ্যে ও আকড়ে রেখেছেন। যা বর্তমান সমাজে দুর্লভ।
এখন মূল কথায় আসি, এদেশে ঘটনা যাই হোক তর্জমা করার লোকের অভাব নেই। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটে যাওয়া ঘটনাও তাই বলে। গল্পের নতুন মাত্রা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বার্তা। 'গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার' অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, যেটি র্যাব নামে পরিচিত সেটি এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত একটি দেশের আইনশৃঙ্খলাকে বাধাগ্রস্ত করা এবং সন্ত্রাসবাদের মদদ দেওয়া ব্যাতিত কিছুই নয়। এ নিয়ে গল্পের নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। নতুন করে একটি গোষ্ঠী, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ কে জড়িয়ে দিয়েছেন এ তালিকায়। যা অত্যন্ত হাস্যকর।
একথা নিশ্চয় কেউ অস্বীকার করবেন না যে, ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ যেমন শোনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখে ‘মানবাধিকার’র বার্তাও তেমন শোনায়। এই মানবাধিকারের মিছে ঝাণ্ডা ঝুলিয়ে পৃথিবীর কতোগুলো দেশকে যে আমেরিকা ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে, গুয়ানতানামো কারাগার আর আবু গারিব কারাগারে কতো হাজার হাজার বন্দীকে যে নির্বিচারে নির্যাতন চালিয়ে নিজেরাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা যদি ধর্তব্যের মধ্যে নাও নিয়ে আসি তবুও তো আমেরিকার পার পাওয়ার উপায় নেই কারণ খোদ নিজ ভূখণ্ডেই নিজ নাগরিকদেরই ওপর আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবছর যে পরিমাণ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালায়, যে পরিমাণ কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতন-নিপীড়ন করে তার সংখ্যাও তো বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় ঢের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নৃশংসতা নিয়ে ব্যাপক হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটির পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছরে পুলিশের গুলিতে কী পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছেন সেই তথ্যের একটি ছক উপস্থাপন করা হলো
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের একটি ছক উপস্থাপন করা হলো । যেখানে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশটিতে পুলিশের হাতে নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা আছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে ২০১৩ সালে পুলিশের গুলিতে ১১০৬ জন, ২০১৪ সালে ১০৫০ জন, ২০১৫ সালে ১১০৩ জন, ২০১৬ সালে ১০৭১ জন, ২০১৭ সালে ১০৯৫ জন, ২০১৮ সালে পুলিশের গুলিতে সর্বোচ্চ ১১৪৩ জন এবং ২০১৯ সালে ১০৯৮ জন নিহত হয়েছেন। অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১০০ মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের খবর বলা হয়, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশের হাতে নিহত কিংবা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানে যারা পুলিশি হেফাজতে কিংবা অন্য পদ্ধতিতে নিহত হয়েছেন, তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
২০২০ সালের ২৫ মে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে আটক করার সময় হাঁটু দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে তাকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। পুলিশের নির্যাতন থেকে বাঁচতে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলেও আকুতিও করেছিলেন ফ্লয়েড। কিন্তু পুলিশ তার প্রতি কোনো করুণা করেনি।
ওই একই বছরের মার্চে নিজ বাড়িতে ব্রিওন্না টেইলর নামে এক নারীকে হত্যা করে পুলিশ। সিএনএনর খবরে বলা হয়, তার ঘরে ঢুকে পুলিশ তাকে আটবার গুলি করেছিল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমেরিকার পুলিশ সংস্কার নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
এবার বলি হাস্যকর কেনো, বিভিন্ন গনমাধ্যম ও কিছু স্বার্থানেশ্বীমহল গুজব ছড়াচ্ছে আল জাজিরার প্রতিবেদনের কারনে সাবেক সেনা প্রধানের আমেরিকার ভিসা বাতিল হয়েছে। আল-জাজিরার বিতর্কিত প্রতিবেদনের কোথাও প্রমাণ দিতে পারেনি সাবেক সেনাপ্রধান এর কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের। না পেরেছে কোন দুর্নিতীর প্রমান দিতে। সেখানে এজাতির কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের লোক হাস্যকর এ প্রচারণার মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। এটি অবশ্য স্পষ্টই যে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার। কারণ, তিনি নিখাঁদ দেশপ্রেমিক। আর এদেশে দেশপ্রেমিকরাই চক্ষুশূল।
সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানান যে তিনি আমেরিকার কোন সংস্থা থেকে ভিসা বাতিলের কোন চিঠি কিংবা কোন ই মেইল পাননি।
আমার প্রশ্ন, কোন তথ্য প্রমানের ভিওিতে প্রথম সারির কিছু গনমাধ্যম এই ভুয়া খবরটি প্রকাশ করলো? আমরা কি ধরে নিতে পারি সাবেক এই সেনা প্রধানের সেনাবাহিনী তে দ্বায়িত্ব পালন কালে কোন দুর্নীতি তথ্য প্রমানাদী না পেয়ে এই ধরনের ভুয়া প্রতিবেদন ছাপিয়ে তাঁকে বিতর্কিত করতে এবং কোন বিশেষ গুস্টির স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ঐ বিশেষ মহল অপপ্রচার ছালাচ্ছেন?
সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমের মিথ্যাচার এবং র্যাব কে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত যে সম্পূর্ণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তার কিছু ব্যাখ্যা ও আমার ধারণা -
বাংলাদেশের সাথে বর্তমানে রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে চীনের সাথে। যা প্রধান ও একমাত্র কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে অবনতির। কারণ বর্তমান সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী চীন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কেও অনেকটা ভাটা পড়েছে। বিভিন্ন উপহার দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র মন পায়নি বাংলাদেশের।
যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া একসাথে পৃথিবীর কারো মিত্র হয় না চীন এবং ভারত একসাথে কারো মিত্র হয় না। চীন প্রথমে নিঃস্বার্থ বন্ধুর মতো ইনভেস্ট করে পরে ঐ রাষ্ট্রকে তার গোলাম বানিয়ে ফেলে। পাকিস্তান, ভূটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার পর চীনের টার্গেট এখন বাংলাদেশ, যা ভারতের জন্য খুবই বিরক্তিকর। এমন অনেক কিছুই হবে -যা
ভাবেনি কেউ আগে। ভারতের বেশ কিছু সংবেদনশীল জায়গায় বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সহযোগিতায় চীন বাহিনী প্রবেশ করতে যাচ্ছে। চিকেন নেক হচ্ছে ইন্ডিয়ার সবচেয়ে দূর্বল জায়গা, ইন ফ্যাক্ট ওই জায়গায় চীন নিজেদের কৌশলগত উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য শেখ হাসিনার সাথে হাত মিলিয়েছে। ইন্ডিয়া কোনভাবেই চায়না যে এই চিকেন নেকের কাছে চিনের উপস্থিতি থাকুক। ইন্ডিয়া নানাভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং হাসিনার সাথে টানাপোড়েনের সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন এই বছর এপ্রিলে চীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করাটা অনেক মহল মেনে নিতে পারেনি বিধায় এই প্রভাকান্ডা ছালাচ্ছে।
পরিশেষে আরেকটি কথা না বললেই নয়। এই বছরের ফেব্রুয়ারি তে জেনারেল আজিজ আহমদ আমেরিকা সফর করেন। তাঁর এই সফরে আমেরিকা যে সম্মান দিয়েছেন বিগত ৫০ বছরেও কোন সংস্থার প্রধানকে এই ধরনের সম্মান দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই। অন্ততঃ বাংলাদেশের কাউকে এত সন্মান দেয়নি তা নিশ্চিত। আল্লাহ যাকে সম্মানিত করেন কুচক্রী মহল তার কিছুই করতে পারে না।
Share This