একদিনেই হচ্ছে আবেদন ও নামজারি

একদিনেই হচ্ছে আবেদন ও নামজারি

বরিশাল প্রতিনিধি : November 28, 2024

জমিসংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজে সরকারি ফি কম হলেও ভূমি অফিসকেন্দ্রিক দালালচক্রের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সেবাগ্রহীতাকে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হতো। সরকার নির্ধারিত নামজারির ফি খুব সামান্য হলেও একেকটি নামজারি করতে কয়েকগুণ বেশি টাকা গুনতে হতো সেবাগ্রহীতাদের। এ জন্য ভূমি অফিসের নাম শুনলে সাধারণ মানুষের মনে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করত। এ পরিস্থিতিতে দালালের দৌরাত্ম্য রোধ ও ভূমি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ভূমির নামজারিতে অভিনব এক সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে বরিশালের গৌরনদীতে।

 

ভূমি অফিসের নিচে সেবাকুঞ্জ নামে উদ্বোধন হওয়া অভিনব ওই কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিনেই জমির নামজারি করে দেওয়া হচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে।

 

দেখা যায়, একদিনেই নামজারি সম্পন্নের বাস্তব চিত্র। এরই মধ্যে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সেবাকুঞ্জ পরিদর্শন করে সেবাগ্রহীতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন একদিনে সম্পন্ন হওয়া ই-নামজারির পর্চা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা জায়, গৌরনদীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. রাজীব হোসেন যোগদানের পর ভূমি অফিস থেকে দালালের দৌরাত্ম্য রোধ এবং সেবাগ্রহীতাদের শতভাগ হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই ভূমি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সেবাকুঞ্জ স্থাপন করেন।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু আবদুল্লাহ খান সেবাকুঞ্জ উদ্বোধনের পর থেকে প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ভূমি অফিসের নিচতলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সেবাকুঞ্জে অবস্থান করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সেখানে ই-নামজারির জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের সামনেই কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এক দিনে সম্পন্ন হয় সেবাগ্রহীতাদের কাঙ্ক্ষিত নামজারি।

 

একাধিক ভূমিসেবা গ্রহীতা জানিয়েছেন, যেখানে নামজারির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও বহুগুণ টাকা খরচ করার পরও দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হতো, সেখানে সকালে আবেদন করার পর বিকেলের মধ্যেই নামজারি করে দেওয়া সত্যিই বিরল। এ সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে ভূমিসেবাকেন্দ্রিক দালালের দৌরাত্ম্য থাকবে না। এ ধরনের সেবা দেশের অন্য উপজেলাগুলোতে চালু হওয়া দরকার।

 

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজীব হোসেন বলেন, এ উপজেলায় যোগদানের পর কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণে জানতে পারি, অফিসের সঙ্গে সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের সংশ্লিষ্টতা একেবারে নেই বললেই চলে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী একেকটা নামজারির জন্য ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বা অনেক ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও অফিসে টাকা দেওয়া লাগবে বলে হয়রানি করা হতো সেবাপ্রত্যাশীদের। এ জন্য একজন দালালকে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এর পরও রোধ করা যাচ্ছিল না দালালের দৌরাত্ম্য।

 

বিষয়টি চরম আকার ধারণ করেছিল। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় সেবাপ্রত্যাশীদের অফিসমুখী করার লক্ষ্যে এবং নির্ভয়ে যাতে আমার কাছে জনগণ আসতে পারেন, এজন্য অফিসের নিচে সেবাকুঞ্জ স্থাপন করা হয়েছে। জমির সব দলিল এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সঠিক থাকা সাপেক্ষে প্রতি বৃহস্পতিবার এক দিনে নামজারি করে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়। যাদের দাখিলকৃত কাগজপত্র ত্রুটিপূর্ণ তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গত চার সপ্তাহে ১৩৩টি নামজারি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং চার শতাধিক সেবাগ্রহীতাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনে অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

Share This