তিব্বতের বৌদ্ধ মতাবলম্বীরা কী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন

তিব্বতের বৌদ্ধ মতাবলম্বীরা কী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন

বিশেষ প্রতিনিধি June 27, 2022

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। তারপর থেকেই সম্ভবত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছেন তিব্বতে বসবাসরত বৌদ্ধ মতাবলম্বীদের একাংশ। লাসা, নিংচি, নাগকু এবং চামদোতে অবস্থিত তিব্বতিদের একটি ইউচ্যাট গ্রুপ থেকে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশ না মানায় স্থানীয় পুলিশ চলতি বছরের ২ থেকে ১২ মে–র মধ্যে ১১ জন তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আটক করে। তাদের মধ্যে আটক অবস্থায় ৭ জন মারা গেছেন এবং তাদের মৃতদেহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, তাদের পরিবার বা সম্প্রদায়ের কাউকে না দিয়েই দাহ করা হয়। মৃতরা হলেন—কালসাং নাইংপো, চোয়েজোর কার্পো, জাময়াং দ্রুপা, চোদাগ, রিগসাং, রাব্যাং এবং গ্যালচোক পাকশি।

স্থানীয়দের কাছে এমন একটি পবিত্র বুদ্ধ মূর্তি বিস্ফোরক ব্যবহার করে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইউচ্যাটে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, স্থানীয় তিব্বতি জনগণের সাথে মঠের সন্ন্যাসীরাও সেখানে বুদ্ধ মূর্তি ভেঙে ফেলার প্রতিরোধ করছেন। অভিযোগ, বুদ্ধ মুর্তি তাঁরাই ভেঙেছেন, এমন হলফনামায় সই করতে জোর বা বাধ্য করার চেষ্টা হচ্ছে। তা না করায় ওই বৌদ্ধ বিক্ষুদের আটক করা হয়েছিল।

অভিযোগ উঠেছে, শি জিংপিং কর্তৃক সূচিত দ্বিতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লবের নতুন নীতির অধীনে বেইজিং ২০১৫ সাল থেকে আক্রমনাত্মকভাবে বুদ্ধ মূর্তিগুলি ভেঙে ফেলছে। আশেপাশের এলাকার স্থানীয় তিব্বতিদের একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিন এবং সাইবার নজরদারির অধীনে রাখা হয়েছে। কোভিড জিরো নীতির অধীনে বিধিনিষেধের অজুহাতে ধ্বংসের স্থানের আশেপাশে স্থানীয়দের জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

ইউচ্যাটে ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মূর্তি ধ্বংসের খবর ও ছবি পাঠানোর সন্দেহে চীনা কর্তৃপক্ষ ১১ জন সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, তাঁদের যোগাযোগের সব রকম উপায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং তাদের যে কোনও প্রতিরোধের উপর কঠোর নজরদারি চালানো হচ্ছে।

অভিযোগ, ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হেনান প্রদেশের ঝুকউ শহরের মহান বুদ্ধ মূর্তি জোরপূর্বক ভেঙে ফেলা হয়েছে। বৌদ্ধ আবেগের সাথে যুক্ত ফেংম্যান জেলার জিলিন সিটিতে শাক্যমুনির ২৯ মিটার উচ্চ মূর্তিও ভেঙে ফেলা হয়। যা করতে ১১ বছর সময় লেগেছিল এবং প্রায় ৩ মিলিয়ন ইউয়ান খরচ হয়। তিব্বতিরা একে ২০০১ সালে তালেবানদের দ্বারা বামিয়ানের বুদ্ধের মূর্তির ভেঙে ফেলার সাথে তুলনা করছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, হেবেই প্রদেশের চেংদে সিটির ওয়েইচাং মাঞ্চু-মঙ্গোলিয়ান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অমিতাভের বিখ্যাত মূর্তিটিকে প্রাচীন সম্রাট কাংজির মূর্তিতে পরিবর্তিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, স্থানীয় সরকার বুদ্ধ মূর্তিটিকে মাও সেতুং, কনফুসিয়াস বা কাংজিতে পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছিল। এটা বেশ স্পষ্ট যে বিস্ফোরক দিয়ে বিধি ভেঙে ফেলা তিব্বতি সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি তালেবানী মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।

বুদ্ধ মন্দির ভেঙে ফেলার তালিকা এখানেই শেষ নয়। হেনান প্রদেশের মেংজিন কাউন্টির লংক্সিং মন্দিরে ১০ মিটার উঁচু শাক্যমুনি বুদ্ধের মূর্তিও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। তিব্বতিরা অভিযোগ করছেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর বৌদ্ধধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস শুরু হয়েছে। তিব্বতিদের অনেকেই মনে করছেন, এভাবে তিব্বতের পূর্ব অংশে বৌদ্ধ ধর্ম ও তিব্বতি সংস্কৃতি মুছে ফেলার প্রয়াস শুরু হয়েছে।

Share This