এই বাজেট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : June 30, 2024
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমি এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। ‘এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২.৬৫ লাখ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং ৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে কি না?
চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। আমরা তো চ্যালেঞ্জ নিয়েই চলতে চাই এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট। আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি। চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই না সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ইচ্ছাটা কি? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেজন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি, এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি এখানে কমানোর কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র মুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা আমরা যে গড়ে তুলবো তারই পদক্ষেপ হিসেবে এই বাজেটে বিভিন্ন যে লক্ষ্যগুলো আমরা স্থির করেছি সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আমি মনে করি এই বাজেটের মধ্যে দিয়ে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০৪১ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। সেই ধারাবাহিকতা আমাদের আছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যায় না এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। বিরোধী দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরও অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন।
মেট্রোরেল নির্মাণের বিরোধীতাকারী তথাকথিত বৃদ্ধিজীবী ও অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলছে। তিনি বলেন, এমআরটি লাইন-১, লাইন-২, লাইন-৪ ও লাইন-৫ এর কাজ পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করলে, ঢাকা শহরে আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। মানুষ খুব আরামে চলাচল করতে পারবে। তাদের জীবন মান উন্নত হবে। আমরা সবগুলো বিভাগীয় শহরে মেট্রোরেল চালু করে দেবো, সেই পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি বলেন, এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়ীতে করে একেবারে কক্সবাজার পৌছে যাবে। সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আমাদের আছে। এতে করে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।
দেশে বেকারত্বের হার তিনভাগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটাও যদি সবাই চায় কাজ করতে পারে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করেছি। শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী করে প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু আঁতেল আছেন, তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণ খেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার হচ্ছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অংক বলে কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। তিনি বলেন,“এইভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করে, তা খুবই দুঃখজনক”।
২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, সকলেই এটাতে যুক্ত হতে পারেন। যেটা তাদের বয়সকালে সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় শান্তিতে বিশ্বাস করি, সংঘাতে নয়। জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিবেশিসহ সকল দেশের সঙ্গে অত্যন্ত সফলভাবে এ নীতি মেনে চলছি। হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়। সেই নীতি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীকে উন্নত করেছি। যুদ্ধ-সংঘাতের জন্য নয়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক হিসাবে। যে কোন ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে না থাকি, সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত, সমৃদ্ধ করেছি, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন গড়ে তুলছি।