খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চলমান আন্দোলনের সমর্থনে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একইসাথে, তারা আজ দুপুর ১২টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ‘কুয়েট বাঁচাতে শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেয়।
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতীকী অনশন পালনেরও আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে, বুধবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত একটি কর্মসূচি থেকে কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ‘কুয়েট বাঁচাতে শাহবাগ অবরোধ’-এর ঘোষণা দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে এসে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। রাত ১১টার পরে আরও কয়েকশ শিক্ষার্থী তাদের সাথে অবরোধে যোগ দেন, ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। এরপর কর্মসূচি ঘোষণা করে রাত ১২টায় শাহবাগ সড়ক ত্যাগ করেন তারা।
জানা গেছে, সম্প্রতি কুয়েটে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সাথে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে অনেকে আহত হন। এর জের ধরে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
এই পরিস্থিতিতে ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। একইসাথে, বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে এবং আবাসিক হলগুলো ২ মে খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। পরের দিন, ১৫ এপ্রিল দুপুরে তারা একের পর এক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
গত সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কুয়েটের ৩২ জন শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেন। এর আগে, ২০ এপ্রিল এক দফা দাবি পূরণের জন্য আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।