৫ দফার ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে : ড. হেলাল

৫ দফার ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিতে হবে : ড. হেলাল

নিজস্ব প্রতিবেদক : October 02, 2025

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির এবং ঢাকা-৮ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, জনগণের প্রত্যাশিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে ৫ দফা দাবি পূরণ করে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন দিতে হবে। 

জামায়াতের প্রস্তাবিত, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’, ‘পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের নির্বাচন’, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চতকরণ’, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা’, এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ করার ৫ দফা দাবি জনগণের দাবিতে রূপ নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহজাহানপুর পূর্ব থানার রুকন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হেলাল উদ্দিন বলেন, এই ৫ দফা দাবি একটি দল ব্যতীত দেশের প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দলও একমত। তাহলে এই দাবি পূরণে সরকারের অনীহা কেন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি কোনো নির্দিষ্ট একক দলকে খুশি করতে চায়, তবে সেটি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। 

এ সময় তিনি আরো বলেন, সরকার যদি জনগণের প্রত্যাশিত ৫ দফা দাবি উপেক্ষা করে তবে জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। 

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বিপ্লবী সরকার এখনো জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি ও আইনগত ভিত্তি দিতে না পারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের এই ব্যর্থতায় জুলাই যোদ্ধাদের পাশাপাশি পুরো জাতি চরম ব্যথিত। 

তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে পারছে না একটি রাজনৈতিক দলের চাপে। একদিকে সরকারের ভেতরে ফ্যাসিবাদের দোসররা অপরদিকে সরকারের বাইরে একটি রাজনৈতিক দল সরকারকে চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। কারণ তারা জানে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হলে এ দেশে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করা যাবে না। তাই তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিতে নানান রকম ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ষড়যন্ত্রে চক্রান্তে আটকা পড়লে শুধু জুলাই চেতনা বিনষ্ট হবে না, এই সরকারেরও আইনগত ভিত্তি হারাবে। ফলে এই সরকারের সব কার্যক্রম এক সময় ফ্যাসিবাদ গোষ্ঠী অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করবে।

এমনকি আজকে যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে রয়েছে তাদেরও বিচারের মুখোমুখি করবে। তাই জাতীয় স্বার্থের পাশাপাশি সরকারের নিজের স্বার্থেও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া অনিবার্য। 

তিনি আরো বলেন, নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে এটি জাতি বিশ্বাস করে না। কারণ নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার দ্বারাই রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। রাজনৈতিক স্বার্থে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করার ফলে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যারা রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে তাদের দ্বারা কখনোই রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। অতীতের রাজনৈতিক সরকারগুলো কেউ দুর্নীতিতে দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান করেছে, কেউ লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে বেগম পাড়া গড়ে তুলেছে। এসব দলের দ্বারা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে না।

ড. হেলাল বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। তবেই দেশের মানুষ একটি সুখী-সমৃদ্ধ বৈষম্যহীন কল্যাণ ও মানবিক বাংলাদেশ পাবে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পুরো জাতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর যেই আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষায় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও শাহজাহানপুর পূর্ব থানা আমির মুহাম্মদ শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত রুকন সমাবেশে থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যসহ থানার রুকনরা (সদস্য) উপস্থিত ছিলেন।

Share This