সেনা কর্মকর্তাদের চাকুরীচ্যুত নিয়ে প্রতারকদের মিথ্যাচার 

সেনা কর্মকর্তাদের চাকুরীচ্যুত নিয়ে প্রতারকদের মিথ্যাচার 

নিজস্ব প্রতিবেদক : July 07, 2024

কতিপয় অর্বাচীন বিদেশে বসে আমাদের গর্বের  সেনাবাহিনী এবং ঊর্ধ্বতন সেনা নেতৃত্ব সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অসৎ উদ্দ্যেশ্যে অপপ্রচারের লিপ্ত রয়েছে। শৃংখলাজনিত কারনে চাকুরীচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কিছু কিছু বিতর্কিত সেনা সদস্য বিদেশে বসে এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় মাঝে মাঝে শোনা যায় গত ২০১৯-২০  সালে সেনাবাহিনী হতে কখনো বলে প্রায় ২৫০ জন আবার কখনো বলে ১৫০ জন চৌকাষ সেনা কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ন মিথ্যা তথ্য এবং অপপ্রচার। 

সেনাবাহিনী একটি সংবেদনশীল বাহিনী যার প্রতিটি সদস্যের শতভাগ আনুগত্য এবং বিশ্বস্থতা থাকতে হবে নিজ দেশের প্রতি। আনুগত্য দুইটি ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রতি বন্টন হতে পারে না। আপনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরী করবেন, পাশাপাশি আপনি এবং আপনার পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যরা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য , জার্মানী সহ অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী রেসিডেন্স (পিআর) গ্রহন করে ভিন্ন দেশ হইতে সন্তানদের বিনা পয়সায় লেখাপড়া এবং চিকিৎষার সুযোগ নিবেন আবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আপনাদের শতভাগ  আনুগত্য এবং বিশ্বস্ততার ভান করবেন তা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এই বিষয়ে গত ২২ আগস্ট ২০১৭ তারিখ সর্বশেষ একটি নির্দেশনা দেওয়া হয় “Policy on Permission for Immigration to Foreign Countries” শিরোনামে যার পত্র নং 23.01.901.057.07.212.01.22.08.17 এবং যেখানে স্পস্ট লেখা রয়েছে যে, “…An officer can neither have duel citizenship nor can be permanent resident (PR) of other countries while in the service. Before receipt of immigrant visa or permanent resident visa (as soon as the officer is called for final interview at respective embassy) the officer shall immediately apply to Militar Secrerary (MS) Branch for retirement / further disposal. Approval of retirement from the service will be at the discretion of Chief of Army Staff”।
অর্থাৎ সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত অবস্থায় কেউ অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমোদন (পিআর/গ্রিন কার্ড) নিতে পারেন না। 

জানা যায়, সেনাবাহিনীর প্রায় ৭৮ জন মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদবীর অফিসার এবং তাদের পরিবারের  নির্ভরশীল সদস্যরা  (২১ বছরের কম বয়সী সন্তান এবং স্ত্রী যারা সেনাবাহিনীর সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকেন) ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে ঐ সকল দেশে বসবাস করে লেখা পড়া, ভাতা গ্রহন, চিকিৎসা সেবা সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন এবং তাদের বা তাদের পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যরা দ্বৈত নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ প্রাপ্তি সম্পর্কে সেনা সদরকে কিছুই জানায় নি।

এই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে যথাযথ অনুসন্ধানের পর চিহ্নিত অফিসারদেরকে নির্দেশ দেয়া হয় পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে হয় তাদের এবং তাদের পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা পিআর/গ্রিন কার্ড আত্বসমর্পণ করবেন অথবা সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে হবে। 

পরবর্তীতে ৭৮ জন অফিসারের মধ্যে মেজর হইতে মেজর জেনারেল পদবীর ২৩ জন অফিসার তাদের এবং তাদের পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা পিআর/গ্রিন কার্ড আত্বসমর্পণ করেন এবং সেনাবাহিনীর চাকরিতে থেকে যান। বাকী যেই ৫৫ জন অফিসার তাদের এবং তাদের পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা পিআর/গ্রিন কার্ড আত্বসমর্পণ করতে অপারগতা জানান, কেবল তাদেরকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করে সেনাবাহিনী হইতে অবসর প্রধান করা হয়।
 
সেনাবাহিনীর মত সংবেদনশীল একটি বাহিনীতে দ্বৈত নাগরিকত্ব বা দ্বৈত আনুগত্য নিয়ে চাকুরীর সুযোগ দেওঁযার অর্থ হতো সেনাবাহিনীর অনেক সংবেদনশীল তথ্যকে ঝুকিতে রাখা, যা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা ভিন দেশের নাগরিকত্ব বা পিআর/গ্রিন কার্ডের লোভ ত্যাগ করতে পারে নাই তাদের অনেকে অবসর নিয়ে ঐ সকল স্বপ্নের দেশে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন এবং কেউ কেউ বিদেশে বসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।

Share This