কেমন আছে গফরগাঁওয়ের চার বাসিন্দা

কেমন আছে গফরগাঁওয়ের চার বাসিন্দা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি December 05, 2024

ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার দত্তেরবাজার ইউনিয়নে এক বাড়িতে একটি গ্রাম যার নাম শরিফগঞ্জ। এটি স্বল্পপুনিয়া মৌজাই অবস্থিত।

গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক ও স্ত্রী মাহফুজা বেগম মেরী। প্রায় ১৩০ বছর পূর্বে খান সাহেব আলী উনার বাবার নামের সাথে মিল রেখে গ্রামের নামকরণ করেন শরীফগঞ্জ

গ্রাম হল জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোট বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজের মাধ্যমে খুব সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করে থাকে। একটি গ্রামে কৃষিজীবী ছাড়াও কামার, কুমার, মাঝি, মেথর, জেলে প্রভৃতি পেশার লোকের বসবাস থাকে। গ্রাম সাধারণত বড় শহর থেকে দূরে অবস্থিত হয়।

গফরগাঁওয়ে উপজেলায় এমন একটি গ্রাম আছে, যার নাম শরীফগঞ্জ। যেখানে রয়েছে একটি বাড়ি, সেই বাড়ীতে বসবাস করে স্বামী-স্ত্রী।

বাড়িতে বসবাসকারীরা মূলত মোঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহের বংশধর। মানসিংয়ের বংশধর যোজার সিং ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে এখানে বাড়ি নির্মান করে এখানে বসবাস করতে থাকেন। স্কুল শিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক যোজার সিংয়ের চতুর্থ বংশধর। রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক আমীর আলী'র (ডাবল এমএ) ছেলে। বর্তমানে স্কুল শিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক এই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।

রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক দীর্ঘদিন টাংগাব হাজী ইসমাঈল দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অবসর নিয়ে কান্দিপাড়া আলিমুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পার্ট টাইম শিক্ষকতা করছেন।

৬ একর জায়গা নিয়ে শরীফগঞ্জ গ্রাম গড়ে উঠে। গাছ লতাপাতার সবুজের একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। গ্রামের পূর্ব দিকে আছে স্বল্পপুনিয়া গ্রাম, উত্তর দিকে আছে নয়াবাড়ী গ্রাম, দক্ষিণ দিকে আছে ময়ড়া গ্রাম, পশ্চিমে আছে সতরবাড়ী গ্রাম।

শরীফগঞ্জে রয়েছে ছয়টি পুকুর। রয়েছে শতবর্ষী ২৫ থেকে ৩০ রকমের আম, কাঠাল, জাম, লেচু, আপেল, কমলা, স্ট্রবেড়ী, আঙুরসহ ফলজ ও ঔষধিজাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বাড়িতে রয়েছে আমীর আলী নামে ইসলামিক পাঠাগার।

পাশের গ্রামেন মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রাম একটি বাড়ি নিয়ে। বাড়িটিতে বর্তমানে শিক্ষক দম্পত্তির বসবাস।

পাশের গ্রামের কলেজ ছাত্র মোহাম্মদ আরমান বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। এই গ্রামের দুইজন মানুষ বসবাস করেন। তাদের দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত।

বর্তমানে বাড়িতে বসবাসকারী রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক বলেন, খান সাহেব আলী ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আলী। উনার বাবার নামের সাথে মিল রেখে শরীফগঞ্জ নাম করন করেন। উনি আমার দাদা হন।১৯২২ রাজা পঞ্চাদশ উনাকে রোপ্য পদক প্রদান করে খান সাহেব উপাধি প্রধান করেন। সৌদি আরবের প্রথম কম্পিউটার ইঞ্জিয়ার আবদুল্লাহ বাড়ির উনি আমার ভাতিজা হন। ত্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার ভাগিনা হয়। মাহমুদউল্লাহ বিয়াদ খান সাহেব আলীর তৃতীয় মেয়ের নাতি। আমাদের বংশে বর্তমানে ৮ জন মাস্টার্স ও ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত অনার্স মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে পাস করেছি। আমার বড় ছেলে ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউটার সাইন্সে মাস্টার্সে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দ্বিতীয় ছেলে ডুয়েট থেকে আর্কিটেডে পড়াশোনা করছেন।

জাতীয় শিশু কিশোর পত্রিকা মাসিক নকীবের সহযোগী সম্পাদক তাশরিফ আহমাদ বলেন, মাওলানা মহিউদ্দিন খানের জীবনের খেলাঘর বইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, শত বছর পূর্বে উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নে ঈশা-খাঁ ও মানসিংহের মধ্যে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধে ঈশা-খাঁ জয় লাভ করে। মানসিংহের কিছু লোক জন এখানে থেকে যায়। তাদেরই বংশধর একটি বাড়ির গ্রাম শরীফগঞ্জ। এই বাড়ির সবাই উচ্চ শিক্ষিত।

Share This