মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে শতাধিক পণ্য আমদানিতে শুল্ক কর হার ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি উল্লেখ করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। আর সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১০টি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পাশাপাশি ৬৫টি পণ্যে আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলে সিপিডি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এ ধরনের সুযোগ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য দেশকেও দিতে হবে। তা করতে না পারলে বৈষম্য হবে। আবার সবাইকে সুযোগ দিলে বিশাল রাজস্ব হারাবে সরকার। এ জন্য রাজস্ব আদায়ে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এ জন্য অনেক ভালোভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা পণ্যের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সূতা, পারমাণবিক চুল্লি ও এর বিভিন্ন অংশ, বয়লার, হাইড্রলিক টার্বাইন, গ্যাস টার্বাইন, দুধ দোহনের যন্ত্র, মিল্কিং মেশিন ও দুগ্ধ খামারের যন্ত্র ও কিছু যন্ত্রাংশ।
এছাড়াও রয়েছে ওয়াইন-সেডার ও ফলের রস উৎপাদনের যন্ত্র, চিনি কলের যন্ত্র, হাঁস-মুরগির ডিম ফোটানোর যন্ত্র (ইনকিউবেটর) ও ব্রুডার এবং এগুলোর যন্ত্রাংশ, স্পিনিং মিল ও বেকারি যন্ত্র, এমআরআই যন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, বাংলাদেশে তার চেয়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে।
গত দোসরা এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নীতির অংশ হিসেবে শতাধিক দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হবে।
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশি পণ্যে এখন মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫২ শতাংশ।
এরপর শুল্ক ইস্যুতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। চিঠিতে তিন মাসের জন্য বাংলাদেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত রাখার আহ্বান জানান তিনি। এরপর চীন বাদে সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বাংলাদেশকে আলোচনার পথ তৈরি করতে বন্ড সুবিধা, আমদানি রপ্তানির পার্থক্য কমানোসহ বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপগুলো জনসাধারণের ওপর করের ভার কিছুটা কমাবে। এ ছাড়া পণ্য রপ্তানিতে এন্ডি এক্সপোর্ট বেইজ কমাবে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর হার পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার চিন্তা রয়েছে সরকারের।