নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজির জগতে মুকুট বিহীন রাজা কুখ্যাত ডন সেলিম

নারায়ণগঞ্জে চাঁদাবাজির জগতে মুকুট বিহীন রাজা কুখ্যাত ডন সেলিম

নিজস্ব প্রতিবেদক : November 25, 2024

ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে রাজনীতির। কিন্তু থেমে নেই চাঁদাবাজি। তবে হাত বদল হয়েছে চাঁদাবাজির। গত ৫ আগস্টের পর স্বার্থান্বেষী মহল এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে এবং কখনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজির সাথে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে। তার মধ্যে অন্যতম নারায়ণগঞ্জে ক্যাসিনো ডন খ্যাত কুখ্যাত সেলিম প্রধান চাঁদাবাজির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তার নামে রয়েছে শতাধিক মানুষের অভিযোগ। এ ব্যাপারে মানব বন্ধনও হয়েছে সেলিম প্রধানের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে। 

ডন সেলিম রূপগঞ্জ এলাকার আড়ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ বছর মেয়াদ চুক্তিপত্রে ১৬ বিঘা জমি ভাড়া নেন। চুক্তিপত্রে উল্লেখ আছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হবে । চুক্তির শর্ত অনুযায়ী  সেলিম প্রধান জামানত বাবদ মোট ৭০ লাখ টাকা নেয়। 

শর্ত অনুযায়ী ওই জমি ১৫ লাখ ঘনফুট বালু দিয়ে ভরাট করা হয়। বালু ভরাট এবং আনুষঙ্গিক  খরচসহ সবমিলিয়ে জামানতসহ ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। পরে ওই জায়গায় ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে ৩৫০টি দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়। যা বর্তমানে আড়ত হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তা নির্মাণ, মসজিদ, অফিস নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রয়োজনীয় টয়লেট নির্মাণ ও অজুখানা নির্মাণসহ সবমিলিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। চুক্তি অনুযায়ী তিনি ১০ বছর ভাড়াটিয়া হিসেবে ভোগদখল করবেন। 

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি ডন সেলিম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ঐ আরত দখলের চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে দুইবার কুখ্যাত ডন সেলিমের বাহিনী হুমকি ও হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানায় মজিবুর নামে একজন অভিযোগ করলে পুলিশ ডন সেলিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর দুই চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ডন সেলিম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ডন সেলিম কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আড়তের একেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা করে টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও তারা এর কোনো প্রতিকার পায়নি।

গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে কুখ্যাত ডন সেলিমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন আড়ত ব্যবসায়ীরা। এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। 

উল্লেখ্য, এই সেলিম প্রধান অল্প বয়সে জাপান যায়। সেখানে এক বয়স্ক নারীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। ঐ জাপানী স্ত্রীর থেকে টাকা নিয়ে ঢাকায় জাপান-বাংলাদেশ (জেবি) নামে কারের একটি শোরুম খোলেন। এক পর্যায়ে ঐ জাপানী স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুরান ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ব্যাংককে ও সেলিম আরো একটি বিয়ে করে। সে অসংখ্য বিয়ে করেছে। ডন সেলিম মূলত অনলাইন ক্যাসিনোর সাথে জড়িত। 

তিনি বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর কান্ট্রি প্রধান। থাইল্যান্ডে বসে ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে দেশেও আসতেন। অনলাইনের মাধ্যমে কয়েন বিক্রি করে ক্যাসিনো খেলায় মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। এমনকি রাজধানী ঢাকায় মতিঝিল ও গুলশান এলাকায়  গোপনে অনলাইন ক্যাসিনোর ব্যবসা করতেন।ক্যাসিনো থেকে অর্জিত অর্থ  অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করতেন। 

২০১৯ সালে দেশব্যাপি ক্যালিফোর্নিয়া বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে এই ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধান থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকে র‍্যাবের হাতে আটক হন। আটকের পর তার নামে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য  বেরিয়ে এসেছিল যা ঐ সময় প্রায় সকল প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, ব্যাপক ভাবে খবর প্রচার হয়। সেলিম প্রধান অবৈধ টাকা বিদেশে পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্থ হলে তাকে মহামান্য আদালত স্বাক্ষ্যপ্রমানের ভিত্তিতে মোট ৮ (আট) বছরের সাজা দেয়। ৪ (চার) বছরের অধিক জেল খেটে সে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে জামিনে জেল থেকে বের হয়ে আসে। জেল থেকে বের হয়ে সে তার পুরানো অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। অবৈধ ভাবে মানুষের জমি দখল, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কোন ঝামেলার জমি বা প্লট খালি করে দেওয়া বা অন্যকে বুঝিয়ে দেয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল চাঁদাবাজী এখন তার দৈনন্দিন কাজ। 

তৎকালীন র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, গুলশানে সেলিম প্রধানের নিজস্ব মালিকানাধীন স্পা সেন্টার ও বিউটি পার্লার রয়েছে। সেখানে চলত অনৈতিক কাজ।প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী এবং সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের  আসা যাওয়া ছিলো নিয়মিত। সেখানে দেশী এবং থাইল্যান্ডলও রাশিয়ার মেয়েদেরকে আনা হতো মনোরঞ্জনের জন্য। সেলিম প্রধানের এক স্ত্রী রাশিয়ার নাগরিক।তার স্পা সেন্টারে প্রভাবশালী  যাতায়াতকারীদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাঁদাবাজি, ব্লাকমেইল সহ নানান সন্ত্রাসী  কার্যকলাপ ও নানা অনিয়ম, অভিযোগ  রয়েছে সেলিমের বিরুদ্ধে।

Share This