মিজানের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগের পাহাড়!

মিজানের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগের পাহাড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক : November 23, 2024

হাজীর কাছ থেকে বেশ কিছু দুনীতি করে প্লট নিয়েছিলেন মিজান ওরফে পাগলা মিজান। 

রাজধানী মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া এলাকায় স্বপনপুরী হাউজিংয়ে রয়েছে তার আরও দু’টি বহুতল বাড়ি। লালমাটিয়া বি-ব্লকে একটি ছয় তলা বাড়ি (২৪/এ)। এরই পাশে ২৪/এ এর সি/ডি নম্বরে লালমাটিয়ায় আরও একটি ৭ তলা ভবন রয়েছে এই মিজানের। মোহাম্মাদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কে আছে আরেকটি ফ্ল্যাট, যেখানে তিনি নিজে বসবাস করেন। এ ছাড়াও রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের মালিক হাবিবুর রহমান মিজান। সেখানেও ১০টি ফ্ল্যাট রয়েছে তার।

এই মিজান ওরফে পাগলা মিজান মিশুক অ্যান্ড কোম্পানির মালিক। এ ছাড়া তিনি ঢাকার হজ কাফেলা অ্যান্ড ট্র্যাভেলসের মালিক বলে জানিয়েছে তার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা। তিনি নিজের নামে ছাড়াও দেশে-বিদেশে নামে- বেনামে টাকার পাহাড় গড়েছেন ক্যাসিনো কাণ্ডের অন্যতম হোতা মোহাম্মদপুরের সাবেক এই কাউন্সিলর।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে মিজানের আলিশান দু’টি বাড়ি ও দামি গাড়ি রয়েছে। যা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে অনেক আগেই জনসম্মুখে এসেছে। তার ভাইদের নামেও রয়েছে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ।

তিনি সরকারি টেন্ডার ছাড়াই বিভিন্ন দপ্তরের কাজ বাগিয়ে নিয়ে তার ভাইদের দিতেন। পাঁচ ভায়ের মধ্যে মিজানের ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯৫ সালে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হন। বর্তমানে ঠিকাদার হেলাল, দুলাল ও শাজাহান নামে তার আরও তিনটি ভাই রয়েছে। মিজানের ভাই শাজাহান লালমাটিয়া ওয়াসার অফিস নিয়ন্ত্রণ করতো। একই সঙ্গে আবাসিক গ্যাসলাইন নিয়ন্ত্রণ করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। মিজানের আরেক ভাই হেলাল আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা-১৩ আসনের সদ্য সাবেক এমপি’র আমলে বিনা টেন্ডারে ৫ থেকে ৬শ’ কোটি টাকার এলজিআরডি ও সিটি করপোরেশনের কাজ করছে। যার ভাগ এলাকাটির আওয়ামী লীগের সব বড় নেতার পকেটে ঢুকতো নিয়মিত। 

হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের এত ক্ষমতার উৎস বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এলাকাটির সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য। এ ছাড়াও এলাকাটিতে তার মাই ম্যান হিসেবে খ্যাত আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিন। এই তুহিনের মাধ্যমেই আদাবর এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখেন মিজান। 

এ ছাড়া মোহাম্মদপুর এলাকায় রয়েছে সাবেক কাউন্সিলর রাজিব, আলা বক্সের ভাই ইয়াসিন বক্স, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা শাহীন, মজিবর প্রমুখ। যারা সকলেই মোহাম্মদপুর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা এবং পাগলা মিজানের সহকারী বলে সবার কাছে পরিচিত। ছাত্র আন্দোলনের সময় এদের সকলকেই অস্ত্র হাতে রাস্তায় নামায় মিজান। এদের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের সময় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালাতে চালাতে গত ১৯শে জুলাই মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ্‌ রোডে শটগানে বুলেট আটকে যায় সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা শাহীনের। সেদিন একটি পিস্তলও হারিয়ে ফেলেন শাহীন। তিনিও এই পাগলা মিজানের খাস লোক হিসেবে পরিচিত। 

এসব বিষয়ে মিজানের বসবাস করা মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব সড়কের বাসা, লালমাটিয়ার বাড়ি, মার্কেটে একাধিকবার গেলেও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত ৫ আগস্ট প্লট পরিবর্তনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। 

এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জুলাই বিপ্লবের বিরুদ্ধে জড়িত আসামিদের ধরতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এসব পাগলা মিজানের মতো অপরাধীরা আত্মগোপনে থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করছি তারাও আইনের জালে ধরা পড়বে।

Share This