কাকের মাংস কাকের খাওয়া ও হিরো আলম হওয়ার সত্যি গল্প!
ডেস্ক রিপোর্ট
February 13, 2022
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময়ই সমগ্র জাতির আস্হা ও ভরসার শেষ আশ্রয়স্হল যা আগেও ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এটা কেবল আমার নয় বরং সকল বাংলাদেশী নাগরিকের বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের দেয়ালে আঁচড় দেয়ার অপচেষ্টায় অনেক চ্যাম্পিয়ন নব্য ও প্রবীণ ব্লগার চেষ্টা করেছে, করছে ও আগামীতেও করে যাবে। কিন্তু, সত্যটা বড়ই নিষ্ঠুর। সত্যিকারের যেকোন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী নাগরিক প্রথমদিকে এসব মুখরোচক গল্পে মজা পেলেও কালের পরিক্রমায় এসব নিমকহারামগনকে ডাষ্টবিনে ছুড়ে ফেলতেও কার্পণ্যবোধ করবে না বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই।
আপনারা হয়তো ভাবছেন এ কেমন ‘ হাই থট মার্কা ‘ লেখার প্যাঁচমার্কা ভূমিকা দিলাম? তাই না?
একটু মজা এবং সঙ্গে গুরুগম্ভীর আলোচনার সূত্রপাত করবো ভেবেই আজ এই ছোট্ট লেখাটি শুরু করছি। সাথে থাকুন। নিরাশ হবেন না আশা করা যায়।
” কাকের মাংস কাক খায় না, পুলিশ ও প্রশাসনের মাংস ভিন্ন মতাদর্শী পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগন না খেলেও সেনাবাহিনীর কিছু (সংখ্যায় অতি নগণ্য) কর্মকর্তা তার নিজ পেশার বিরুদ্ধচারণ কেন করে নিজেকে বোকার রাজা বানাতে মরিয়া, তা বুঝতে চাই। ”
এবার যে কারণটি নিয়ে আজকের বিষয়ের অবতারণা করছি, তাতে আমি আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করবো, যদিও তা খাল কেটে কুমির ডেকে আনার মত এপিসোডের সম্ভাবনাময় একটি চেষ্টা হলেও আমি এর জন্য পূর্বপ্রস্তুতি মানসিকভাবে নিয়ে রেখেছি।
লেখককে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত চৌকষ অফিসার বলেই জানি। ২৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে তিনি সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে পদাতিক বাহিনীতে যোগদান করেন ১৯৯১ সনে। তিনি সিলেটে কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক ছিলেন। তাকে একজন দেশপ্রেমিক বলেই জানতাম। লেঃ কর্ণেল পদবী হতে উচ্চতর পদবীতে প্রমোশন না পেয়ে স্বেচ্ছায় সকল সূযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি অবসরগ্রহণ করে বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে চাকুরী নিয়ে পরিবারসমেত সেখানেই বসবাসরত। তার লেখনীর হাত উচ্চমানের হলেও পরিপক্কতার অভাবটা দেশপ্রেমিকতার কারণে বোদ্ধামহল মেনে নিয়েছেন।
শুনেছি বাংলাদেশ সরকার তাকে PNG করেছে (সেনানিবাসে অবান্চিত)। কেন করেছে তা জানিনে। জানার ইচ্ছেটাও নেই। তবে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের রিপোর্ট যে উপরোক্ত অফিসারকে PNG করতে ভূমিকা রেখেছে, তা বলাই বাহুল্য। পিএনজিপ্রাপ্ত একজন অফিসার তার মৌলিক অধিকার তথা অবসরে সিএমএইচ সুবিধা, জলসিড়িতে জমি বাতিল, সকল সেনানিবাসে অবান্চিত। এই পিএনজি করণের বিষয়টি সেনাসদর হতে চিঠি ইস্যু করা হলেও, পিএনজি মূলত হয় বিভিন্ন সংস্হার গোপন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। আমি যতটুকু খবর জানি, উক্ত অফিসারকে পিএনজি করার পূর্বে সংশোধিত আচরণের সূযোগ দেয়া স্বত্তেও তিনি তা তার কমান্ডো স্টাইলে ড্যাম-কেয়ার ভাব দেখান। কিন্তু পিএনজি ঘোষণার পর টনক নড়লে তিনি বিভিন্ন মহলে এটা উঠানোর তদবির করেন। কারণটা উপরেই প্রকাশিত।
অফিসারটি আমার ফেসবুক বন্ধুর তালিকায় ছিল। নিজের প্রচার প্রচারণায় তার একটু আকর্ষণ থাকলেও দেশপ্রেমিক সৈনিক বিবেচনায় ওসব আমি ইগনোর করতাম। তার নারসিজম আচরণটি আমি বরাবরই এড়িয়ে গিয়েছি তার প্রতি আমার ভালোবাসার বন্ধনে। এরই নাম কমরেডশিপ।কিন্তু যখনি দেখলাম এই অফিসার সেনাবাহিনী নিয়ে আজেবাজে কথা লিখছে, তখনি আমি তাকে আনফ্রেন্ড করি। এটা আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা। ভিন্নমত প্রকাশ ও গঠনমূলক সমালোচনাকে আমি স্বাগত জানাই ও শ্রদ্ধা করি। কিন্তু সীমালঙ্ঘন করলে লাগাম টেনে ধরাকেও কর্তব্য বলে মনে করি।
ব্যক্তি আক্রোশের ঝাল আপনি প্রতিষ্ঠানের উপর ঝাড়লে আপনি আমার সন্তান হলেও আমি আপনাকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করবোই। ক’দিন আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় অর্থনীতিতে কিভাবে সরাসরি অবদান রাখছে ও বিদেশে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে, তা নিয়ে লিখেছি শুধু একটিমাত্র কারণে। তা হলো, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ হয়তোবা পুরোপুরি এ বিষয়ে সম্যক ধারনা নেই বলে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমার আপনার অহংকার এবং একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান।
আমার আপনার এই সেনাবাহিনীর কিছু সংখ্যক লোক খারাপ থাকতে পারে, যা সব পেশা/প্রতিষ্ঠানেই বিরাজমান। আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যগন কিন্তু এই মাটিরই সন্তান। দোষে গুনেই তারা আপনার আমার মতন এক একজন সাধারণ নাগরিক। তাই বলে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনী নিয়ে “বকওয়াস” বরদাস্ত করে সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই। এসব দেখে আঙ্গুল চুষে মুখে কুলুপ দিয়ে বসে থাকাটাও আমি অন্যায় বলে মনে করি। এতে যদি আপনারা আমাকে অপরাধির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান, তাকেও আমি স্বাগত জানাবো।
এবার আসি আমার প্রতিবাদের বিষয়ে কিছু প্রশ্ন নিয়ে যার উত্তর জানতে আগ্রহী আমরা।
সেনাবাহিনীতে দু’ধরণের আদেশ আছে। একটা হলো Lawful Command যা না মানলে আপনাকে Insubordination এর জন্য কোর্টমার্শাল করে বহিষ্কার ও সাজা দেয়া হয়। আরেকটি আছে Unlawful Command, যা আপনি মানতে বাধ্য নন। এবং এক্ষেত্রে আপনার কি কি করনীয়, তাও বলা আছে সেনা আইনে এবং সেথায় আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করা আছে। আমরা সবাই ISO নিয়ে কমবেশি জানি। ISO এর বেশীরভাগ প্রসিডিউর সেনাবাহিনীর প্রসিডিওর হতে নেয়া। একজন সেনাসদস্য তার আইডি কার্ড হারালে অধিনায়ক সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন কতটুকুন সাজা প্রদানের অধিকারপ্রাপ্ত, তা সেনা আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে। সেনাবাহিনী তাই চলে একটি ষ্ট্রাক্চারড গঠনে। এখানে কর্তা যা ইচ্ছে করবেন, তার এখতিয়ার নেই।
যে অফিসার আজ ” হিরো আলম বনতে ২০১৮ হতে আজ-অব্দি মরীয়া (নায়ক হিরো আলমের প্রতি পূর্ন শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) ” তাকে কিছু প্রশ্ন করে আজ শেষ করবো।।
১। আপনি কি বিজিবিতে থাকাকালীন আপনার বর্ণিত কাহিনীর পর পদত্যাগ করেছিলেন? করেন নি। পদত্যাগ করে যদি বিদেশে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এপিসোড লিখতেন, তখন আপনার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন জাগতো না।
২। Unlawful Command কেন আপনি সহ্য করেছিলেন? প্রতিবাদের তরিকা ও সহায়তা তো আপনার কাছেই ছিল (সেনা আইন)।
৩। আপনি বিজিবিতে জয়পুরহাট ব্যাটেলিয়ন (যা চোরাচালানের জন্য প্রসিদ্ধ) অধিনায়ক থাকাকালীন আপনার দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত হতে আগত ফলমূল ও মশলা জাতীয় প্রতিটি ট্রাক হতে কত অর্থ (টাকা ভদ্রভাষায় উতকোচ) গ্রহণ করতেন?
৩। জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া স্যার সেনাপ্রধান থাকাকালীন আপনি তো ঢাকাতেই পোষ্টেড ছিলেন ASU তে? তাই না?
৪। অতঃপর আপনি সুপারসিডেড হয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ম মোতাবেক বিজিবিতে পোষ্টিং পেয়ে রংপুর ও জয়পুরহাটে কাজ করেছিলেন? সে সময় নাকি আপনি পুনরায় ঢাকায় পোষ্টিং পাবার জন্য ততকালীন বিজিবির ডিজি জেনারেল আজিজ স্যারের সামনে গিয়ে কান্না করেছিলেন? পারলে তার পা-টাও ধরতেন! কথাটা কি সত্য?
৫। শুনেছি ASU তে থাকাবস্হায় আপনি বর্তমান সরকারের প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলতেন? আর এখন আমেরিকায় গিয়ে উল্টাটা করছেন কারো নজরে আসার জন্য? কথা কি সত্য?
৬। আপনি তো ভাই মিরপুরের খালেক এমপি সাহেবের আদর্শ সাগরেদ? যখন যেদিকে হাওয়া, সেদিকে পাল তোলা কি আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য?
৭। আপনি রাজনীতি করুন। আমাদের দোয়া থাকবে। কোন দল বা গোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আপনি আজ যে প্রতিষ্ঠান তথা আপনার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নুন খেয়েছেন, তার সাথে বেঈমানী করবেন না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাকে হেদায়েত করুন এবং শীঘ্রই আপনার শুভ বুদ্ধির উদয় হউক, এই কামনায় বিদায়।
পরিশেষে পাঠকদের কাছে একটি বিনীত অনুরোধ। আপনারা আপনাদের সেনাবাহিনী নিয়ে আপনাদের দ্বিধাদ্বন্দে ফেলতে পারে এমন সাবজেক্ট পরিহার করবেন, নাকি একে উতসাহিত করবেন, তা আপনাদের বিবেকের উপরই ছেড়ে দিলাম।
ভালো থাকবেন।
লেখক : আহমেদ ফেরদৌস, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও কলামিস্ট।
Share This