সরকারবিরোধি নতুন জোট হচ্ছে
ডেস্ক রিপোর্ট
January 08, 2022
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের গণফোরামকে বাদ রেখে সরকারবিরোধি প্রধানদল বিএনপির নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের কার্যক্রম চলছে। ‘দলনিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে গঠন হচ্ছে এ জোট। জোটের আত্মপ্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বিএনপির নেতৃত্বে গত সংসদ নির্বাচনের আগে গঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ ও এর আগে গঠিত ‘২০ দলীয় জোট’।
ওই ফ্রন্টে যুক্ত থাকা ড. কামালের গণফোরাম ছাড়া অন্য দলগুলোকে নতুন জোটে রাখার লক্ষ্যে আলোচনা ও প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ ‘বর্জন’ করা সবদলকে জোটে রাখতে আলোচনা ও নানাভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষনেতারা। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, নতুন জোটের সম্ভাব্য নাম- ‘সম্মিলিত বিরোধিদলীয় জোট’ বা ‘সম্মিলিত বিরোধিদলীয় ঐক্যফ্রন্ট’। এখনো জোটের নাম চূড়ান্ত হয়নি। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নাম নির্ধারণ হবে। সরকারবিরোধি ‘অভিন্ন দাবিতে’ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে মাঠে ‘যুগপৎ আন্দোলনে’র লক্ষ্যে এ জোট গঠন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দল ও মতের শক্তিকে এককাতারে ঐক্যবদ্ধ করে জোরদার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের’ দাবি আদায় এবং আগামী নির্বাচনে ‘জয়ী হয়ে সরকার গঠন করা’ নতুন জোট গড়ে তোলার মূখ্য উদ্দেশ্য। ‘সরকারি বাঁধা’ এড়াতে জোট গঠনের কোনো কোনো কার্যক্রম যথাসম্ভব গোপনীয়তার সঙ্গে চলছে।
যোগাযোগ করলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুঠোফোনে মত ও পথকে শনিবার বিকেলে বলেন- ‘সরকারের উদ্দেশ্যে আমাদের পরিষ্কার কথা, সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তারপর পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিন। এসব গণদাবি সরকার মেনে না নিলে অতীতের সরকারগুলোর যে অবস্থা হয়েছে, এ সরকারের সেই পরিণাম ভোগ করতে হবে।’
তিনি বলেন- ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে চলমান সংলাপ ইতিমধ্যেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এ সংলাপে কোনো লাভ হবে না, অর্থহীন সংলাপ। নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নেই।’
সূত্রমতে, সারাদেশে সাংগঠনিকভাবে তুলনামূলক শক্তিশালী ও রাজনীতির মাঠে সরকারবিরোধি বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ডান, বাম ও ধর্মপন্থি দল এবং সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বিএনপির জোট গড়ে তোলা হচ্ছে। ‘অপরাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করার উদ্দেশ্যে’ আটটি বাম দল নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটকেও নতুন এ জোটে আসতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইসলামী আন্দোলনসহ রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ ‘বর্জন’ করা দলগুলোকে জোটে রাখার প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপির নেতৃত্বের ২০ দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্টে অর্ন্তভুক্ত যেসব দল জনগণের কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য, বা যাদের জনভিত্তি আছে- সেসব দল নতুন জোটে থাকবে। তবে বাম দলগুলোকে জোটে রাখতে কৌশলে হিসেবে বাইরে রাখা হবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে। জামায়াতকে জোটে রাখার বিষয়ে সরকারবিরোধি কোনো কোনো বাম ও মধ্যপন্থি ধারার দলের ঘোরতর আপত্তি আছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বের চারদলের জোটের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও দুটি দল নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠিত হয়।
সূত্র জানায়, ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বিএনপি সংলাপ শুরুর আগেই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। সংলাপের চিঠি পাওয়ার আগে দলের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমে তা জানিয়েও দেন শীর্ষনেতারা। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের একাংশের সভাপতি ড. কামাল ইতোমধ্যে ‘রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগ দেওয়া উচিত’ বলে সংবাদমাধ্যমে মতামত দেন। তাঁর এ বক্তব্য ‘সন্দেহের চোখে’ দেখছে বিএনপি।
বিএনপির শীর্ষনেতারা মনে করেন- ড. কামালের ‘ফাঁদে এবারও পা দিলে’ তা দলের জন্য ‘আত্মঘাতী’ হবে। রাষ্ট্রপতির আগের বারের সংলাপসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বৈঠকে বিএনপি অংশ নেয়ায় ‘গণতন্ত্রবিরোধি কার্যক্রমের’ দেশ ও বিদেশে বৈধতা অর্জন করে সরকার। এতে সরকারের ‘সম্মান ও মর্যাদা’ বাড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিএনপি। সরকারকে চাপে রাখার কৌশলে ‘অটুট থাকতে নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়ায়’ নতুন করে বিএনপি ব্যবহৃত হতে চায় না।
তাছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ঐক্যফ্রন্ট নিষ্ক্রিয়। ড. কামালের দল মূলত ‘ওয়ানম্যান শো পার্টি’। এর মধ্যে দলে ভাঙন হয়েছে। এমন দলকে নিয়ে ‘মাঠে সফল আন্দোলনের স্বার্থে’ বিএনপি নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে বিএনপির মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েক নেতা ও বিশিষ্ট পেশাজীবী দলের নতুন জোটে সুবিধাবাদী ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে না রাখার মত দেন। তাদের মতামতের সারমর্ম লিপিবদ্ধ করে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের আরো কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে।
Share This