ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার পর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কী

ট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার পর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কী

আন্তজার্তিক ডেস্ক : March 02, 2025

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে ঘটে যাওয়া বাগবিতণ্ডা নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকাশ্য বিরোধের পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। উভয় নেতার মধ্যে তীব্র মতবিরোধের ফলে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককেও সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

 

এ ঘটনার পর বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনকে যতটা সাহায্য করা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সেটি কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে এমন এক সময়ে বাগবিতণ্ডা হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি করার কথা ছিল। তবে, এই ঘটনার ফলে সেই চুক্তি স্থগিত হয়ে গেছে। ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার ইচ্ছাও ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

বিবিসির সাংবাদিক জেরেমি বোয়েন মনে করেন, এই উদ্বেগের মূল কারণ ট্রাম্পের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা। ট্রাম্প দাবি করেছেন, পুতিন তাঁকে যথেষ্ট "সম্মান" করেন এবং তাঁর সাথে কাজ করতে চান, যা ইউক্রেনের জন্য বড় বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স একাউন্টে পোস্ট করা এক মন্তব্যে তিনি বলেন, "যখন জেলেনস্কি শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন তিনি ফিরে আসতে পারেন।" এর মাধ্যমে তিনি ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।

 

ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভ্লাদিমির ফেসেঙ্ক এর আগে মন্তব্য করেছিলেন, "এখন ইউক্রেনকে নিয়ে মার্কিন মনোভাব কী হবে তা বলা যাচ্ছে না, তবে ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।" এই বাগবিতণ্ডার পর, মার্কিন প্রশাসন হয়তো ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এ ছাড়া, এই ঘটনার পর ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে, ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পর্ক আগে থেকেই খুব ভালো ছিল না। যদিও একসময় তাঁদের মধ্যে সহযোগিতা ছিল, কিন্তু ট্রাম্প ইউক্রেনকে নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তিনি জেলেনস্কিকে "স্বৈরশাসক" হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, ইউক্রেন মিথ্যার ওপর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে। এই ঘটনাটি পশ্চিমা বিশ্বের নিরাপত্তা নীতির উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, এবং ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের নিরাপত্তার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের সাথে এই দ্বন্দ্বের পর ন্যাটো জোটের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলবে। এমনকি ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যদি ন্যাটোর কোন সদস্য রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করা হয়, তাহলে তা গোটা জোটের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে। তবে, ট্রাম্পের নীতির ফলে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

 

ট্রাম্প প্রশাসন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার বিরোধী ছিলেন। তিনি বারবার বলেছেন, তিনি শীঘ্রই এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চান। তবে, তিনি স্পষ্ট করে কখনোই বলেননি কীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা চেয়েছিলেন, কিন্তু ট্রাম্প তার অনুরোধ উপেক্ষা করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে "সম্মান" করেন, এবং পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে চান, যা ইউক্রেনের ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

 

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্য বাগবিতণ্ডা এক নতুন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংকটের সূচনা করেছে, যা ইউক্রেনের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের সম্পর্কের এই ক্রান্তিলগ্নে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা এবং সামরিক সহায়তা সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনার পর, ন্যাটো জোট এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। সামনে ইউক্রেন কি তার শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাবেন, নাকি সংকট আরও বাড়বে, তা সময়ই বলে দেবে।

Share This