জেনারেল আজিজ এর কারিশম্যাটিক দক্ষতায়, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তা

জেনারেল আজিজ এর কারিশম্যাটিক দক্ষতায়, জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনা কর্মকর্তা

মোঃ শাহিদুন আলম December 23, 2021

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আবারও শীর্ষে বাংলাদেশ। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় প্রায় ৩৩ বছর যাবত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে সেনাবাহিনী। সৎ, নির্ভীক ও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা মালি, দক্ষিণ সুদান কঙ্গো, লাইবেরিয়া থেকে শুরু করে ৪০ টি দেশে ৫৪ টি মিশনে শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের সেরা হিসেবেই প্রমাণ করেছেন।

এসব মিশনে ১ লাখ ৩৭ হাজার সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। শান্তির পথে আসা এসব দেশে মানবাধিকার রক্ষা, বেসামরিক নাগরিক বিশেষত শিশু ও নারীদের সুরক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে গেছে বাংলাদেশিরা।

 

একই সঙ্গে সড়ক ও স্থাপনা নির্মাণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা দেশসমূহ সফর করেন। সেখানে তিনি সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার বিষয়টিতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। তিনি জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ইতিবাচক ফলও মিলে।

 

সূত্র জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক সদস্যের অংশগ্রহণের দিক থেকে অতীতে প্রথমেই ছিল বাংলাদেশ। পরবর্তীতে ইথিওপিয়া এই স্থান দখল করে। জাতিসংঘের র‌্যাঙ্কিং’এ আবারও শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এটি জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের সেনাপ্রধানের জামানায় অনন্য এক প্রাপ্তি।

 

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের অফিস অব মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স, ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনের (ডিপিও) চিফ অব স্টাফ পদটিতে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দিবেন একজন বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তা। তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.আজিজ আহমেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফরের চার মাসের মাথাতেই মিলে এমনই এক সুসংবাদ। ঐতিহাসিক এই সফর এরই মধ্যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য তিনি খুলে দিয়েছেন অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দূয়ার। অর্জনের অসংখ্য পালকে ইতিহাস গড়েই নিজেদের গৌরবদীপ্ত করছেন দেশপ্রেমিক সেনারা।

 

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও কার্যকর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বের দূরদর্শীতায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

 

 মার্কিন সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি ১৩ দিনের সরকারি সফরে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

সেই সফরে জাতিসংঘ সদর দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্যান্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে তিনি জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি কন্টিনজেন্ট প্রেরণ এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের বিভিন্ন উচ্চতর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আরও অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলেন।

জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্ব এই ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেন এবং এরই ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ এই পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীর একজন অফিসারকে নিয়োাগ দেওয়া হয়েছে।

আরও অর্জন বাস্তবতার মেলবন্ধন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরপরই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে (মিনুসমা) সেক্টর কমান্ডার পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবির একজন কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঞ্জুর নিয়োগ পান। এছাড়াও জাতিসংঘ সদর দফতরে মিলিটারি অ্যাডভাইজার এবং চিফ অব স্টাফ পদে নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘে মিলিটারি অবজারভার এবং স্টাফ অফিসার হিসেবে ২০টি অতিরিক্ত নিয়োগ বরাদ্দ মিলেছে।

এদিকে, সেনাবাহিনী প্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সফরকালে তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জনবল আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব রাখেন এবং তাদের মোতায়েনের কাজ চলমান রয়েছে।

 

ইতোমধ্যেই সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স কোম্পানি (ব্যানএসএফসি) এবং লাইট কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্সের (এলকিউআরএফ) ৫০ জন জনবল বৃদ্ধিসহ ব্যানব্যাট-এর লেভেল-১ হাসপাতালকে লেভেল-২ হাসপাতালে উন্নীত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে।

একই মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কুইক রিআ্যকশন ফোর্স (কিউআরএফ) এবং ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি মোতায়েনের সম্ভাবনাও রয়েছে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সমন্বিত স্পেশাল ফোর্স সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েনের ব্যাপারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পেয়েছে।

সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মালিতে একটি শক্তিশালী কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স এবং একটি এভিয়েশন ইউনিট মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা শিগগিরই মোতায়েন করা হবে। ইতোমধ্যেই ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক (ডিআর) অব কঙ্গোতে ৬ সদস্যের অ্যারোমেডিক ইভাকুয়েশন টিম (এএমইটি) এবং ১৩ জন অতিরিক্ত মিলিটারি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেনাবাহিনী প্রধান দীর্ঘমেয়াদি বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধের ব্যাপারেও জাতিসংঘের সিনিয়র নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর ফলে সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বকেয়া রিইমবার্সমেন্ট পরিশোধ করেছে জাতিসংঘ। পাশাপাশি মালিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের চারটি কন্টিনজেন্ট রিস্ক প্রিমিয়াম পাচ্ছে।

সেনাবাহিনী প্রধানের ঐকান্তিক উদ্যোগের কারণেই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েনের পূর্বেই সকল শান্তিরক্ষীদের করোনার টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করেছে।

 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিজেদের জীবনবাজি রেখেই সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছে সেনাবাহিনী। অতীতের মতোই নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সঙ্গে চলমান মহাদুর্যোগেও সফলভাবেই সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাপ্রধান।

Share This