ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশই সামাজিক বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ভাতাভোগীর ৫০ শতাংশই সামাজিক বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : September 01, 2025

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দারিদ্রতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, ভাতাভোগীদের ৫০ শতাংশই সামাজিক বা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের স্থানীয় সরকার নেই। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। আমরা জাতীয় পর্যায়ে একটা রেজিস্ট্রার তৈরি করতে চাই।

সোমবার (১ সেপ্টম্বর) চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, এখন সময় এসেছে সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির। এটি আমাদের থাকতে হবে। আমরা একদম গরিব দেশ না, আমরা মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো অজুহাত চলবে না।

সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে স্কুলসেবা ও স্বাস্থ্যসেবা জড়িত। এটাই মৌলিক ন্যায়বিচার। যার জীবন ধারণেরই কোনো উপায় নেই, তার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কোনো লাভ নেই।

আমাদের শক্তিশালী রাজস্বনীতি নেই জানিয়ে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের যথেষ্ট শক্তিশালী রাজস্বনীতি নেই। আমাদের সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেই।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশে প্রত্যেকের দারিদ্র্যের কারণ একেক রকমের। কেউ অধিক সন্তান নেওয়ার কারণে দারিদ্র্য, কারও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ। এজন্য প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান বলেন, দেশের মিসিং দারিদ্র্যসীমার সামান্য ওপরে থাকা মানুষদের নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে।

 

 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কয়েকটি বাজেটের প্রবণতা এবং পরিবর্তনের তুলনা করা হয়েছে, যেখানে বেশিরভাগই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত দারিদ্র্য, বৈষম্য, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এবং জলবায়ু ঝুঁকির মুখে, সামাজিক সুরক্ষা মানব উন্নয়ন, স্থিতিস্থাপকতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ প্রদান করে। সরকার গত দশক ধরে এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট এই লক্ষ্যগুরোর প্রতি অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

এতে আরও জানানো হয়, এই বছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষার জন্য মোট বরাদ্দ ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা (প্রায় ৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার) অন্তর্ভুক্ত, যা মোট বাজেটের ১৪.৭৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ১.৮৭ শতাংশ।

রূপান্তর গণনা করা হয়েছে ৫১ টাকা ১২২ (৯ জুলাই ২০২৫ তারিখের বিনিময় হার অনুসারে)। এই অব্যাহত অগ্রাধিকার দারিদ্র্য বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং লিঙ্গ সমতা পর্যন্ত বিস্তৃত উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সামাজিক সুরক্ষার গুরুত্বকে নির্দেশ করে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বেশকিছু কৌশলগত ও কাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা ও সুসংগতি উন্নত করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির একত্রীকরণ- যা গত অর্থবছরে ১৪০ থেকে কমিয়ে এ বছর ৯৫ করা হয়েছে; বিতরণ ব্যবস্থার আরও ডিজিটাইজেশন, যেমন সরকার-থেকে-ব্যক্তি (জিটুপি) অর্থপ্রদানের সম্প্রসারিত ব্যবহার এবং গতিশীল একক রেজিস্ট্রি, নগদ-ভিত্তিক সহায়তা এবং স্নাতকোত্তর পদ্ধতির দিকে অব্যাহত পরিবর্তন, যা দক্ষতা উন্নয়ন এবং জীবিকা নির্বাহের প্রচারের সঙ্গে আর্থিক সহায়তাকে একত্রিত করে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। অতিথি হিসেবে ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. মনজুর হোসেন, জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিব মোখলেস-উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ত্রেৎজা, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি।

Share This