ইরান-ইসরাইল সংঘাতে দুভাগ ইউরোপ

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে দুভাগ ইউরোপ

আন্তজার্তিক ডেস্ক : June 23, 2025

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা তুঙ্গে। এরই মধ্যে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের তিন প্রধান দেশ-জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। 

একদিকে জার্মানি ইসরাইলের প্রতি অটল সমর্থন রেখে তার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অন্যদিকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য কিছুটা নরম ও সমঝোতামূলক মনোভাব পোষণ করছে। 

এই তিন দেশের মধ্যে মতপার্থক্য শুধু কূটনীতিকেই জটিল করেছে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যের অগ্নিগর্ভ উত্তেজনায় শান্তি ফেরানোর প্রয়াসকেও ধূলিসাৎ করছে। আলজাজিরা। 

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ থামাতে ইউরোপের বড় দেশগুলো চেষ্টা চালালেও এখনো কোনো ফল আসেনি। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য এই তিনটি বৃহৎ ইউরোপীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে বৈঠক করেন। 

উদ্দেশ্য ছিল ইসরাইল-ইরান যুদ্ধকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেওয়া থেকে বিরত রাখা। কিন্তু ওই বৈঠকে কোনো বাস্তব ফল আসেনি। জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য-এই তিন দেশকে একসঙ্গে ‘ই-৩’ বলা হয়।

‘ই-৩’ দেশগুলো কেন বিভক্ত?

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এই তিনটি দেশের মধ্যে ইসরাইল নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা গেছে। ইসরাইলের প্রতি ই-৩-এর অবস্থান ভিন্ন হয়ে গেছে। জার্মানি সব সময়ই ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে পরিচিত। 

গাজার সাধারণ মানুষদের ওপর ইসরাইলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ নিয়েও কোনো সমালোচনা করেনি দেশটি। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধেও জার্মানি তেলআবিবকে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে। গত বছর লেবার পার্টি সরকারে আসার পর যুক্তরাজ্য ইসরাইলের প্রতি কিছুটা কঠোর মনোভাব দেখাতে শুরু করে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম হিসাবে ফ্রান্স গত বছরের এপ্রিলেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়।

ইরান বা ইসরাইলের ওপর ই-৩ দেশগুলোর প্রভাব কতটা?

ই-৩ অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী হলেও ইরান বা ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা ও যুদ্ধসংক্রান্ত সিদ্ধান্তে তাদের প্রভাব খুবই সীমিত। এই তিন দেশের সম্মিলিত মোট অর্থনৈতিক উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ১১ ট্রিলিয়ন ডলার। যা ইউরোপের অর্থনীতির বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে। 

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের বিমানবাহী রণতরী এবং বহিঃসেনা অভিযান চালানোর সক্ষমতা রয়েছে। যা তারা বিভিন্ন সময়ে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় ব্যবহার করেছে। এই দুই দেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তি হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ। 

কিন্তু ইরান বা ইসরাইল তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো বাইরের চাপ মেনে নেয় না। যুদ্ধ এবং আত্মরক্ষার প্রশ্নে তারা নিজেদের সিদ্ধান্তেই অটল থাকে।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে ই-৩ কি কোনো সমঝোতা করাতে পারবে?

ই-৩ এর কূটনৈতিক ইতিহাস, বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি (জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া তারা এককভাবে তেমন কার্যকর কিছু করতে পারে না। 

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক জর্জ টজোগোপোলাস বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ই-৩ একসঙ্গে সমন্বিত কূটনীতি চালাত তাহলে আশা জাগতো। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো যদি স্বাধীনভাবে চেষ্টা করে তাহলে তাদের সাফল্য অনিশ্চিত।’

জাতিসংঘ কি এই যুদ্ধের সমাধান দিতে পারবে?

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ এই সংকটের সমাধান দিতে পারবে না। কারণ পরাশক্তিরা বিভক্ত। হয় যুক্তরাষ্ট্র, নয়তো রাশিয়া বা চীন কোনো না কোনো পক্ষ ভেটো দিয়ে তা আটকে দেবে। 

ইরান ও ইসরাইলকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে। চীন বর্তমানে ইরানের সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অংশীদার। রাশিয়া সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান আক্রমণ না করার আহ্বান জানালেও তারা ইরানের পাশে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। তাই তারা যুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখছে।

Share This