মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে হঠাৎ পদত্যাগ করলেন ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। গত সোমবার রাতে দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে পাঠানো এক চিঠিতে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। চিঠিতে ধনকড় জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যগত কারণে ও চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি পদত্যাগ করছেন। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সোমবার বিকেলেও ফুরফুরে মেজাজে দেখা যাওয়া ধনকড় কেন রাতে হঠাৎ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন, তা নিয়ে ভারতজুড়েই চলছে জল্পনা। কারণ, স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে মেয়াদ শেষের আগেই কোনো উপরাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ঘটনা বিরল। তাঁর এই ইস্তফাকে অবাক করা ও ব্যাখ্যাতীত বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজ্যসভার একাধিক সাংসদের দাবি, সোমবার বিকেলেও তারা ফুরফুরে মেজাজেই দেখেছিলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনকড়কে। মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পার্লামেন্টের ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও ডেকেছিলেন। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কিছু বড় ঘোষণা দেওয়ারও কথা ছিল তাঁর। ফলে তাঁর এই আকস্মিক সরে দাঁড়ানো বিস্ময়ের জন্ম দিচ্ছে। যদিও ভারত সরকারের তরফ থেকে এখনও এ নিয়ে অতিরিক্ত কিছু জানানো হয়নি। ফলে উপরাষ্ট্রপতির আচমকা পদত্যাগ নিয়ে বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। ধনকড়ের পদত্যাগকে ‘অপসারণ’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।
জগদীপ ধনকড়ের জন্ম রাজস্থানের ঝুনঝুনু জেলার কিথানা গ্রামে, ১৯৫১ সালের ১৮ মে। সেখান থেকে শুরু করে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে পৌঁছানোর এই যাত্রা ছিল অনবদ্য। আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে রাজস্থানের বার কাউন্সিলে নাম নথিভুক্ত করার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, ঝুনঝুনু লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে। চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভায় সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে নির্বাচিত হন রাজস্থানের কিশনগড় বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। ২০২২ সালেই ভারতের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালে, অর্থাৎ প্রায় দুই বছরের বেশি সময় বাকি ছিল।