বিশ্বের অন্যতম দামি কফি! হাতির মল থেকে তৈরি হয়
নিজস্ব প্রতিবেদন ১৫:০৬
December 27, 2021
সাতসকালে মেজাজ চাঙ্গা করতে নাকি এই এক কাপ কফিই যথেষ্ট। অনেকেই হলফ করে এ কথা বলেন। তবে সে কফি তৈরি করতে কী কী লাগে? বেশ সহজ প্রশ্ন মনে হলেও উত্তর শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। আর দাম শুনলে মাথাও ঘুরে যেতে পারে।
তবে কফি-চর্চা শুরু আগে অক্ষয় কুমারের কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভাল। সম্প্রতি বলিউডের ‘খিলাড়ি’ বলেছেন, “ফিটনেস বজায় রাখতে নিয়মিত গোমূত্র পান করি।” তবে শুধু গোমূত্রই নয়, অক্ষয় নাকি হাতির মল মেশানো চা-ও পান করেছেন।
হাতির মল থেকে চায়ের কথা আপাতত বাদ দেওয়া যাক। কথা হচ্ছে কফির। তবে এতেও হাতির মলের প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া যাবে না। কফির সঙ্গে হাতির মলের কী সম্পর্ক?
কফির সঙ্গে হাতির মলের সম্পর্ক এড়ানো যাবে না। বিশেষত যখন বিশ্বের অন্যতম দামি কফির প্রসঙ্গ উঠে আসে।
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। হাতির মল থেকেই তৈরি হয় বিশ্বের অন্যতম দামি কফি। নামও গালভরা— ব্ল্যাক আইভরি কফি। এ কফির জন্মস্থান থাইল্যান্ড।
হাতির মল থেকে কী ভাবে ব্ল্যাক আইভরি কফি তৈরি হয়? তা জানার আগে ব্লেক ডানকিনের কথা বলতে হয়। তিনিই ব্ল্যাক আইভরি কফি প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক।
সাল ২০০২। ব্লেক ডানকিন তখন জাপানের এক সংস্থায় মোটা বেতনের চাকরি করছেন। সে সময়ই ব্লেকের কানে এসেছিল, তাইল্যান্ডের কোপি লুয়াক কফির জন্য কফিপ্রেমীরা ৫০ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় যা সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি) পর্যন্ত খরচ করছেন। কেন এত দাম সে কফির? গন্ধগোকুলের মল থেকে নাকি সে কফি বিনস তৈরি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ব্লেকের মাথায় ব্যবসার আইডিয়া খেলে গিয়েছিল।
চাকরি ছেড়ে ব্ল্যাক আইভরি কফি নামে সংস্থা খুলে ফেলেন ব্লেক। কফির বিন তৈরি করা হত হাতির মল থেকে। যদিও গোড়ায় গন্ধগোকুলের মলও ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন তিনি। তবে সে সময় কোপি লুয়াক কফির জন্য গন্ধগোকুলকে জোর করে খাওয়ানোর অভিযোগ ওঠে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। ফলে বিকল্প হিসাবে হাতির মল ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন ব্লেক।
কফি বিনস তৈরিতে হাতির মল ব্যবহারে ফলও মিলল হাতেনাতে। ব্লেক ডানকিনের সংস্থার তৈরি কফির স্বাদ অপেক্ষাকৃত কম তেতো এবং কিছুটা ক্যারামেল এবং চকোলেটের মতো।
কী ভাবে তৈরি হয় ব্ল্যাক আইভরি কফি? সংস্থার দাবি, প্রতি দিনের খাবারের সঙ্গে অ্যারাবিকা চেরি মিশিয়ে তা খেতে দেওয়া হয় হাতিকে। তৃণভোজী হওয়ায় চেরির সেলুলোজে উৎসেচন হয়। ফলে হাতির মল থেকে ‘মিষ্টি ফলের সুগন্ধ’ বার হয়। ব্লেকের সংস্থার দাবি, এক কেজি কফি তৈরির জন্য ৩৩ কেজি চেরি খাওয়াতে হয় হাতিদের।
এ বার হাতির মল সংগ্রহ করে তা পরিষ্কার করে রোদে শুকোতে দেওয়া হয়। খানিকটা এ দেশে ঘুঁটে দেওয়ার মতো। রোদে শুকোনোর পর প্রথমে তার উপরি ভাগ ফেলে দেওয়া হয়। এর পর তা সংগ্রহ করে যন্ত্রের মাধ্যমে আলাদা করা হয়। পরে সেগুলিকে যন্ত্রের মধ্যে শুকনো করে ভাজা হয়।
থাইল্যান্ডর চিয়াং সায়েন এলাকায় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এলিফ্যান্ট ফাইন্ডেশন-এ যে হাতিরা আশ্রয় পায়, মূলত সেখান থেকেই তাদের মল সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলে।
কফি তৈরির কেঠো প্রস্তুতি তো হল। তবে গরমাগরম কফির কাপটি ঠোঁটস্থ করতে কত খরচ হবে? কয়েকটি পাঁচতারা হোটেলে পাওয়া গেলেও এর দাম সেই সব হোটেল কর্তৃপক্ষের নিয়ামানুযায়ী হবে। তবে নিজের বাড়িতে আয়েসে বসে এই কফি খেতে গেলে এক প্যাকেট ব্ল্যাক আইভরি কফির দাম পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ এর এক কেজির দাম ২৬ হাজার টাকার কাছাকাছি। খাবেন নাকি এক কাপ কফি?
Share This