বেলুচিস্তান নিয়ে কড়া বার্তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর, ভারতের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ

বেলুচিস্তান নিয়ে কড়া বার্তা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর, ভারতের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ

আন্তজার্তিক ডেস্ক : June 03, 2025

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমদ শরিফ চৌধুরী বলেছেন, বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটিকে কখনোই দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

মঙ্গলবার (৩ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও টিভি।

‘হিলাল টকস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় দুই হাজার শিক্ষকের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিরতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নামের সংগঠনটি ভারতের সরাসরি অর্থায়নে সক্রিয় এবং সংগঠনটির নেতৃত্ব বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তিনি এই গোষ্ঠীকে "হিন্দুস্তানের ফিতনা" হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, যারা এই সংগঠনের সদস্য, তারা মূলত ভারতের হয়ে কাজ করছে।

আইএসপিআর প্রধানের ভাষায়, এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী শুধু পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সমাজ ও অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং একদিন এই প্রদেশ পাকিস্তানের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অঞ্চলে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, জনগণ থেকেই সেনাবাহিনীর জন্ম এবং জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক চিরস্থায়ী ও বিশ্বাসভিত্তিক।

এদিকে, শনিবার কোয়েটায় এক বড় জির্গায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, বেলুচিস্তানে যারা উগ্রপন্থার পথে গিয়েছে, তাদের ফেরানোর চেষ্টা চালাতে হবে। তিনি বলেন, অভিযোগের সমাধান হতে পারে আলোচনার মাধ্যমে এবং একে অপরকে ভাই হিসেবে গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে।

শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, যারা দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে, তারা সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তিনি জনগণকে আহ্বান জানান এসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে।

তিনি জানান, করাচি- কোয়েটা মহাসড়কটিকে ‘রক্তাক্ত সড়ক’ বলা হচ্ছে, তবে এর সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ঘোষণা দেন, পরবর্তী উন্নয়ন বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে বেলুচিস্তানের জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাপটপ সরবরাহ করা হবে।

পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা ভুল পথে গিয়েছে, তাদের জাতীয় জীবনের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তবে এই বক্তব্যের বাইরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বেলুচিস্তানে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক কর্মীদের দমন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ করে আসছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অভিযোগ করেন, বেলুচিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, বৈষম্য ও দমনমূলক নিরাপত্তা নীতির কারণে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব জন্ম নিয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও, প্রদেশটি পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক পিছিয়ে।

Share This