পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম গুঞ্জনের ডালপালা

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম গুঞ্জনের ডালপালা

কুশ কুমার কুশল : February 03, 2025

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সকল অপরাধ ও কুকীর্তি  ফাঁস হয়েছে । বেরিয়ে এসেছে থোলের বিড়াল। পুলিশ জনগণের বন্ধু কাগজে-কলমে সব ঠিক থাকলেও বাস্তবে  তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার অতন্দ্র  প্রহরী  পুলিশ। জনগণের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। যা সম্পূর্ণ দেশদ্রোহী কাজের সাথে শামিল। বাংলার মানুষের কাছে পুলিশ হয়েছে  সমালোচিত ও ঘৃণার পাত্র। 

কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকার বাড়ি,গাড়ির মালিক বনে গিয়েছেন। চাকরি শেষ জীবনেও কোটি টাকা হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার । কিন্তু অসৎ পুলিশ অফিসাররা ঘুষ, দুর্নীতি করে সিনেমা কে ও হার মানিয়েছে। অসাধ্য কে সাধন করেছেন। মিথ্যা মামলার ভয় ভীতি দেখিয়ে অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। হাজারো সুখের সংসার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন। করেছেন কাউকে ভিটামাটি, বাড়ি ছাড়া। আবার কাউকে করেছেন সন্তানহারা পিতা মাতা। অনেকে বিনা অপরাধে পরিবার আত্মীয় স্বজনদের ফেলে রেখে রাতের পর রাত প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। 

বিগত সরকার আমলে অনেক পুলিশ সদস্য  বিনা কারণে  চাকরিচ্যুত হয়েছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থান  আন্দোলনের পর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরি  ফিরে পেতে  আন্দোলন করে আসছেন।  আন্দোলনে চাকরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের  নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি  অভিযোগ  তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমের কাছে। 

অভিযোগ  রয়েছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ২ বছর  পুলিশ হেডকোয়ার্টাসে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই আছে যারা ২ বছরের অধিক সময় পার হয়ে গিয়েছে তবুও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে রয়েছেন। সেসব কি করে সম্ভব?  সংশ্লিষ্ট যেসব কর্তৃপক্ষ  আছে  তারা কি এসব বিষয়গুলো নজরদারি করে না । নাকি তারাও তাদের উত্তরসূরী।তা প্রশ্ন থেকে যায়? একটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন  করার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর মানুষকে  কোন কারণ ছাড়াই গুম খুন নির্যাতন করেছেন । হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে। অনেকেই ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে  তাদেরকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।  ঊর্ধ্বতন এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের  অভিযোগের  ফিরিস্তির  কথা বলে শেষ করা যাবে  না। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিসিএস ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে  সবচেয়ে বেশি  অপরাধী। তারা নারী কনস্টেবল ও এসআইকে অনৈতিক  কাজের প্রস্তাব দেয়।তাদেরকে শয্যা সঙ্গী হিসাবে পেতে চায়। যদি তারা রাজি না হয় তাহলে তাদেরকে বিনা অপরাধে চাকরিচ্যুত করা হয়। অনেক নারী পুলিশ সদস্যরা  পরিবার পরিজনের কথা ভেবে চাকরি হারানোর ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হয় না। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘোর অপরাধের তথ্য। একজন এসপিকে প্রমোশন পেতে হলে  ১০ জনকে চাকরিচ্যুত করলে তাদের প্রমোশন হয়। পুলিশ কল্যাণের নাম করে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে পেনশনের টাকাও হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

একাধিক চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা বলেন,  বিমানবন্দরে পুলিশের মাধ্যমে স্বর্ণ পাচার করা হয়। এছাড়া মাদক ও ইয়াবার সাথে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। এসপি বাবুল ছিলেন পুলিশের সৎ আদর্শ ন্যায় নিষ্ঠাবান একজন অফিসার। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে  পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য পুলিশ  ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, খাবারের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয়  সে খাবারের মান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া নিম্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সাথে অনেক খারাপ আচরণও করা হয়। 

চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা সময় সংবাদকে বলেন, আইন, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আপনারা সবকিছু যাচাই বাছাই করে অতি দ্রুত আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করুন। রাজপথে আমরা মানুষের জনদুর্ভোগের কারণ হতে চাই না। তিনি আরো জানান,  চাকরি ফিরে পেতে রাজপথে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করার কারণে অনেক পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু আমি এসবে বিচলিত নই। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যতই ঝড় তুফান আসুক  আমৃত্যু পর্যন্ত লড়ে যাব।  আমরা নায্য অধিকার চাই, আমরা আমাদের চাকরি ফিরে পেতে চাই। আমরা বিনা অপরাধে চাকরি হারিয়েছে। একটি স্বাধীন  সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ড মোটেই কাম্য নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে পুলিশ জনগণের  স্বৈরাচারী ও শত্রু হয়ে উঠেছিল। আমরা এমন পুলিশ চাইনা। আমরা জনগণের সেবক হয়ে কাজ করতে চাই। সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে চাই। পুলিশের গৌরবময় মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। বাংলাদেশ পুলিশ হবে জনগণের আস্থাভাজন বন্ধু।

Share This