সরকারকে গণভোটের আদেশ দেওয়ার সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

সরকারকে গণভোটের আদেশ দেওয়ার সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের

নিজস্ব প্রতিবেদক : October 28, 2025

গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের জন্য আদেশ দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকারপ্রধানের কাছে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট করার কথাও সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি। তবে এই আদেশ জারির পর থেকে যে কোনো দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে সেটার সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।

‘প্রয়োজনীয় সংশোধন সংযোজন, পরিবর্তনের জন্য আমরা সাংবিধানিক পাওয়ার হিসেবে জনগণের ক্ষমতা যেন ব্যবহৃত হয়, সেজন্য এই প্রস্তাব করেছি। আমরা আশা করি যে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করা যাবে।’

আলী রীয়াজ বলেন, তবে আমাদের আরও একটি বিকল্প প্রস্তাব আছে। আমাদের দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব যেমনটি আমি আগেই বলেছি শুরুতে যে, প্রক্রিয়ার দিক থেকে একটা বড় অংশই একই রকম। একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। আমাদের দ্বিতীয় বিকল্পেও বলা হচ্ছে যে সরকার একটি আদেশ করবেন। সেই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটি মাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। 

তিনি আরও বলেন, যখন বিল হিসেবে উপস্থাপিত হবে এবং গণভোটের মধ্য দিয়ে যদি জনগণের সম্মতি লাভ করা যায় তবে ওই বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কাজে সহযোগিতা করবে। এটা কোন অবস্থাতেই কেবলমাত্র তাদের গ্রহণের জন্য দেওয়া হবে না। এটা যেন তাদের কাজের সহযোগিতা করে। অর্থাৎ সংবিধান সংস্কারের জন্য যে পরিষদ তৈরি হবে, সেই পরিষদ জুলাই জাতীয় সনদের স্পিরিটকে ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন-সংযোজন, পরিবর্জন-পরিবর্তন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংশোধনের যে বিষয়গুলো জনগণের দ্বারা সম্মত হবে, যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারেন, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অর্থাৎ আপনা-আপনি সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোকে প্রতিস্থাপন করবে। ২৭০ দিনের দায়িত্ব পালনের পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। নির্বাচনের পর থেকে জাতীয় সংসদ হিসেবে কার্যকর থাকবে। যদিও জাতীয় সংসদের সদস্যরাই সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হচ্ছেন। তথাপি আমরা প্রস্তাব করেছি— জাতীয় সংসদের সদস্যরা একাধিক ক্রমে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে শপথ নেবেন। সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার নিজস্ব রুলস অব প্রসিডিউর তৈরি করবে। 

আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ জাতীয় সংসদের যিনি স্পিকার হবেন তিনি সংবিধান পরিষদের সভাপতিত্ব করবেন। তার অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার ওই সভার সভা ওই পরিষদের সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাদের উভয়ের অনুপস্থিতিতে সংস্কার পরিষদে গঠিত সভাপতি প্যানেল থেকে ওই পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন এবং কোনো অবস্থাতেই এমন পরিস্থিতির সূচনা হবে না যে সরকারের দেওয়া বিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আমরা এটা আস্থা রাখতে চাই। 

আলী রীয়াজ বলেন, গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের এক নতুন যাত্রার সুযোগ এবং সূচনা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যে রাষ্ট্র কাঠামো ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি করেছিল তারও আগে গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে বারবার যে হোঁচট খাওয়ার অভিজ্ঞতা সেগুলোকে মোকাবিলা করেই, বিবেচনায় রেখেই যেন রাষ্ট্র সংস্কারের এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সুপারিশ করা হয়।

‘সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, বাস্তবায়নের উপরেখা নির্দেশ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধের প্রেক্ষাপটে আমরা একটি বিশেষজ্ঞ দলের সহযোগিতা নিয়েছি, সাহায্য নিয়েছি। যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী এবং একজন আইনের শিক্ষক। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি। এই সুপারিশগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যে সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়। 

Share This